সাধারণ মানুষ ট্রেডিং-এর দিকে ঝোঁকে একটাই মূল কারণে - টাকার প্রতি আকর্ষণ, বা বলা যায় লোভ। টাকা এমন এক জিনিস, যা মানুষকে অনেক সময় ভুল পথে টেনে নেয়। আমি নিজেও এই জিনিসটা নিজের জীবনে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনেক সময় খালি পকেট নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে, তাই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি - এই টাকার লোভই মানুষকে ট্রেডিং-এর দিকে টেনে আনে।
অনেকে ভাবে, ট্রেডিং মানেই সহজে টাকা রোজগার করা যায়। দু’তিন দিন লাভ হলো, মনে হয় বুঝি পথ খুলে গেছে। কিন্তু ঠিক পরের তিন দিনেই দেখা যায়, পুরো অ্যাকাউন্ট খালি! আমিও একসময় এমনই করতাম। ছোটখাটো কাজ করে যা সামান্য স্যালারি পেতাম, তার কিছু অংশ বাঁচিয়ে ট্রেডিংয়ে ঢুকতাম। প্রথমে সামান্য লাভ হতো, তারপর একদম শেষ! সেই সময় বুঝেছিলাম — এটা শুধু আমার নয়, অনেক ছোট ট্রেডারেরই বাস্তবতা।
মানুষ ভাবে, ট্রেডিং থেকে খুব দ্রুত টাকা কামানো সম্ভব, অথচ বাস্তবটা একদমই আলাদা। ট্রেডিং এমন একটা জিনিস, যেখানে সত্যিকারের দক্ষতা গড়তে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগে। এই সময়টা লাগে মার্কেট বুঝতে, রিস্ক ম্যানেজ করতে, আর নিজের মানসিকতা ঠিক রাখতে। তাই শুধু টাকার লোভে নয়, শেখার ইচ্ছে থেকেই ট্রেডিংয়ে নামা উচিত।
ট্রেডিং করলে কি সত্যিই প্রফিট হয়?
ট্রেডিং করলে লাভ হতে পারে — এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্য যে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ট্রেডিং করে ক্ষতির মুখে পড়ে। ভারতের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-এর একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ইনভেস্টিংয়ের তুলনায় ট্রেডিংয়ে লস করার হার অনেক বেশি। সেখানে বলা হয়েছে, প্রায় ৯৫% ট্রেডার নিয়মিত ক্ষতি করেন, আর মাত্র ৫% ট্রেডারই ধারাবাহিকভাবে প্রফিট করতে পারেন। অর্থাৎ, ট্রেডিং থেকে লাভের চেয়ে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এখন প্রশ্ন হলো - এত মানুষ জেনেও কেন ট্রেডিংয়ের দিকে ঝুঁকছে? কারণটা খুব স্পষ্ট — টাকার লোভ। অল্প সময়ে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে নিয়ে যাচ্ছে। SEBI-এর রিপোর্টে এই বাস্তবতা একেবারে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে। বেশিরভাগ ট্রেডার ক্ষতি করেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না, কারণ “হয়তো এবার ভাগ্য ঘুরবে” - এই আশাতেই তারা আবার নতুন করে ট্রেডিংয়ে ঢোকে।
তবে একটা কথা পরিষ্কার করে বলা দরকার - ট্রেডিং করলে লাভ হবে না, এমন ভাবাটাও ভুল। লাভ করা সম্ভব, কিন্তু সেটার জন্য দরকার জ্ঞান, অনুশীলন আর ধৈর্য। ট্রেডিং কোনো “দ্রুত ধনী হওয়ার শর্টকাট” নয়। এটি এমন একটি দক্ষতা, যা রপ্ত করতে সময় লাগে, ভুল থেকে শেখা লাগে, আর নিজের মানসিক শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
তাই যদি সত্যিই ট্রেডিং থেকে প্রফিট করতে চান, আগে শেখার প্রতি মনোযোগ দিন। মার্কেটের ট্রেন্ড বোঝার চেষ্টা করুন, রিস্ক ম্যানেজমেন্টের নিয়ম শিখুন, আর নিজের মধ্যে ধৈর্য তৈরি করুন। তাহলেই একদিন এই মার্কেটে টিকে থাকা সম্ভব হবে।
ট্রেডিং করে কি মানুষ সত্যিই লস করে?
হ্যাঁ, একদম সত্যি কথা, ট্রেডিং করে অধিকাংশ মানুষ লস করে। এটা আমি বলছি না, SEBI-এর রিপোর্টও তাই বলছে। যারা স্টক মার্কেট দেখেছেন, তাদের রিপোর্ট ভুল হতে পারে না। তাই হ্যাঁ, ট্রেডিং করে অধিকাংশ মানুষ লস করে।
সবচেয়ে বড় কারণ যেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি-মানুষের মাইন্ড নিজে ভাবতে পারা ভুলে গেছে। তাদের মাথায় সবকিছু শেখানো হয়ে গেছে, তাই যতক্ষণ না আপনি নিজের মন বা ট্রেডিং সাইকোলজি ঠিক করছেন, ততক্ষণ ট্রেডিং না করে ইনভেস্টিং করে নিজের শেখা শুরু করুন। তাহলেই লাভবান হবেন।
ট্রেডিং নিজে খারাপ কিছু না, আবার খুব ভালোও না। নিজেকে কন্ট্রোল করে করলে ট্রেডিং ভালো, কিন্তু কন্ট্রোল হারালে সেটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ, স্বল্প সময়ে বেশি টাকা রোজগার করার আশাতেই মানুষ ট্রেডিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
তাহলে কি ট্রেডিং না করাই ভালো?
এটা বলা ভীষণ কঠিন, কারণ SEBI রিপোর্ট অনুযায়ী ৫% মানুষ প্রফিটে আছে। তাই একদম খারাপ বলা যায় না। যদি আপনি ওই ৫% মানুষের মতো কাজ করতে পারেন, তাদের অভ্যাস, ডিসিপ্লিন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অনুসরণ করতে পারেন, তাহলে আপনিও ট্রেডিং করতে পারেন। কিন্তু সেই ৫% মানুষের মতো কাজ শেখা এত সহজ নয়।ট্রেডিং খুব ইজি প্রোসেস মনে করা
বেশিরভাগ মানুষ ট্রেডিংকে খুব সহজ প্রোসেস মনে করে, তাই কী হয়? যখন দেখা যায় ট্রেডাররা ট্রেডিংয়ে ঝাঁপ দেয়, তখন তারা বুঝতে পারে না কোন ফিল্ডে কাজ করছে। কারণ এখানে লাইভ কাজ হয়, কিন্তু এটা কোনো প্র্যাকটিস করার জায়গা নয়। একটা অ্যাপ আছে-নামের Front Page-যা আপনি Google Play Store-এ পাবেন। ওই অ্যাপে গিয়ে আপনি ডেমো ট্রেডিং অনুশীলন করতে পারবেন।ট্রেডাররাএকবার দু’বার লাভ হলে তারা ভেবে বসে এটা খুব ভালো ফিল্ড এবং কিছুটা আত্মবিশ্বাস আসে। ফলে তারা সহজ মনে করে এই ফিল্ডটাকে।
আমি যতদূর দেখেছি, ট্রেডিং এমন একটি ফিল্ড যা বাইরে থেকে দেখলে খুব সহজ মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি বোঝা কঠিন। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত অনুযায়ী, এটা খুব সহজ ফিল্ড নয়। নতুন হলে এই ফিল্ডে প্রায় ৫ বছর শিখে কাজ করুন। তার আগে শুধু পেপার ট্রেডিং করে প্র্যাকটিস করুন এবং ইনভেস্টিং শিখুন। ভুল করলেও ইনভেস্টিং-এ আপনি সামলে নিতে পারবেন, কিন্তু ট্রেডিং আপনাকে ভুল করার মতো পরিস্থিতি রাখবে না।
এটা খুব তাড়াতাড়ি টাকা বানানোর মাধ্যম হিসেবে বিপুলভাবে মার্কেটিং করা হচ্ছে।
নিজেদের কর্মজীবনে কম রোজগার প্রভৃতি
বেশিরভাগ মানুষ তাদের চাকরি বা ব্যবসায়িক জীবনে আয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। তাই অনেকেই অতিরিক্ত ইনকামের উৎস হিসেবে ট্রেডিংকে বেছে নেয়। কিন্তু বেশিরভাগই বোঝে না—এটা এমন এক ক্ষেত্র, যা যেমন ভালো আয় দিতে পারে, তেমনি মুহূর্তের মধ্যেই বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।
আমার যতদূর দেখা, ট্রেডিংয়ের শুরুতে প্রায় সবাই কিছুটা লাভ দেখতে পায়। তখন মনে হয়, “আরও একটু অপেক্ষা করি, লাভটা হয়তো আরও বাড়বে।” কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টোটা—চার্ট নিচে নামতে শুরু করে, আর সেই সামান্য লাভটুকুও হারিয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্যান্ডেল উপরের দিকে উঠবে বলে ভাবি, কিন্তু সেটা আর ওঠে না। সময়ের সাথে সাথে টাইম ডিকের কারণে প্রিমিয়ামও কমে যায়, ফলে লাভের বদলে ক্ষতিই বাড়তে থাকে।
এই অভিজ্ঞতা আমি নিজেও বহুবার দেখেছি। তবুও তখন মনে হতো, সাধারণ চাকরির চেয়ে ট্রেডিং করে হয়তো সহজেই টাকা রোজগার করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে বুঝতে পারলাম, এই ধারণাটা একেবারেই ভুল। একের পর এক লস খাওয়ার পর বুঝেছি, ট্রেডিং কোনো সহজ আয়ের পথ নয়—এটা এমন এক জায়গা, যেখানে অভিজ্ঞতা, শৃঙ্খলা আর সঠিক জ্ঞান ছাড়া টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
প্যাসিভ ইনকাম সোর্স মনে করা
ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং কোনো প্যাসিভ ইনকাম সোর্স নয়। কিছু মানুষ মনে করে, কিন্তু এটা ভুল। আমি যতদূর দেখেছি, বেশিরভাগ মানুষ এই ভুলটাই করে।
ট্রেডিংকে ব্যবসা বা বাণিজ্য হিসেবে
অনেক সাধারণ মানুষ ট্রেডিংকে একটি ব্যবসা বা বাণিজ্য হিসেবে দেখে, কিন্তু আমার মতে এটা একদম ভুল ধারণা। আমি মনে করি, ট্রেডিং হলো একটি স্কিল-ব্যবসার তুলনায় এখানে নিরাপত্তা অনেক কম। অধিকাংশ মানুষ এখানে কাজ করে, কিন্তু অধিকাংশই লোকসান করে। এটা শুধু SEBI-এর রিপোর্টেই দেখা যায়, আর আমি নিজেও কাজ করে তা বুঝেছি।সুতরাং ট্রেডিং এক ধরনের স্কিল ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এবং এটিকে শেখা সহজ কাজ নয়, কারণ এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার মনস্তত্ত্ব এবং নিজস্ব নিয়মনীতি মানার উপর।
অল্প সময়ে টাকা বানানোর সুযোগ
ট্রেডিং এমন একটা ফিল্ড, যেখানে একদিনেই অনেক টাকা কামানোর সুযোগ থাকে। তাই সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়, আর নিজেদের সামলাতে পারে না। কারণ, আজকালকার দিনে সবাই দ্রুত উপায়ে টাকা রোজগারের পথ খুঁজছে। সেই লোভেই অনেকে এই ফিল্ডে আসতে বাধ্য হয়। তার ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার লোভনীয় মার্কেটিং মানুষকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।
আমি নিজেও প্রথম দিকে এই প্রলোভনে পা দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, খুব সহজ পথ এটা - একটু শিখলেই টাকা রোজগার শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব সত্যটা বুঝেছি যখন কাজটা নিজের হাতে করেছি কয়েক বছর ধরে। তখনই বুঝতে পেরেছি, সবকিছুরই একটা প্রক্রিয়া আছে, আর ট্রেডিংও তার ব্যতিক্রম নয়। এটা আপনাদের ক্ষেত্রেও হবে, যতক্ষণ না আপনারা নিজেরা ট্রেডিং শুরু করছেন। লেখাটা পড়ে হয়তো সচেতন হতে পারবেন, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হলে নিজের হাতে কাজ করতেই হবে — এটাই বাস্তবতা।
অনলাইনে আয়ের সহজ মাধ্যম
অনলাইনে টাকা রোজগারের সবচেয়ে সহজ মাধ্যমগুলোর মধ্যে একটা হলো ট্রেডিং। কারণ, অন্য অনেক অনলাইন কাজের তুলনায় এটা তুলনামূলক সহজ মনে হয়। অন্য কাজগুলোতে যেমন প্রচুর পরিশ্রম ও সময় লাগে, তাই অনেকেই ট্রেডিংকে “সহজ উপায়” ভেবে নেয়।
আমিও প্রথমে একইভাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝেছি -এটা যতটা সহজ মনে হয়, আসলে ততটা নয়। বরং, ট্রেডিং এমন এক জিনিস যেখানে প্রতিদিনের ঝুঁকি বাড়তেই থাকে। তাই আমি পরে ঠিক করলাম, এই বিষয়টা ভালোভাবে শিখতে হবে। শেখার পেছনে লেগে গেল প্রায় চার-পাঁচ বছর। এখনো আমি ট্রেডিং খুব সাবধানে করি।
কারণ, ট্রেডিং যদিও অল্প সময়ে উপার্জনের সুযোগ দেয়, কিন্তু এর ঝুঁকিও অনেক বেশি। ভুল করলে পুরো পুঁজিটাই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এটা এমন একটা ফিল্ড, যেখানে লোভ নয় - শেখা, ধৈর্য আর কৌশলই টিকে থাকার আসল চাবিকাঠি।
সবশেষে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি
ট্রেডিং সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। যদি আপনার হাতে ৬০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকা না থাকে, তাহলে ট্রেডিংয়ে কাজ করা উচিত নয়। আপনাদের জন্য একমাত্র সঠিক পথ হলো ইনভেস্টিং - যেখানে আপনি যত কমই আয় করুন না কেন, নিয়মিতভাবে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু ট্রেডিং সাধারণ মানুষের জন্য নয় - এটা আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
আপনি কি শেয়ার বাজারে নতুন?
চিন্তা নেই! আমরা প্রতিদিন দিচ্ছি সহজ ভাষায় স্টক মার্কেট শেখার টিপস।
শেখা শুরু করুন