টাকার হিসাব রাখুন Money Tracking Habit for Beginners

রোজগার তো করছেন, কিন্তু জানেন কি কিভাবে টাকাকে ধরে রাখতে হয়? তাহলে আসুন জেনে নিন StockMarketWealth-এ (বাংলায়)।

মানি ট্র্যাকিং অভ্যাস তৈরি করুন – টাকা ধরে রাখার বাস্তব কৌশল

একটি টেবিলের উপর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সামগ্রী যেমন নোটবুক, ক্যালকুলেটর, চার্ট, মুদ্রা এবং দুই ব্যক্তি মানি ট্র্যাকিং নিয়ে আলোচনা করছেন

বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের অন্যতম বড় সমস্যা হলো টাকা ধরে রাখতে না পারা। আপনি যতই আয় করুন না কেন, যেন মাস শেষ হওয়ার আগেই হাত একেবারে খালি হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও যেন টাকা জমে না।

মাসের শুরুতে বড় প্ল্যান, কিন্তু শেষে শূন্য পকেট কেন?

মাসের প্রথমে যখন বেতন আসে বা ব্যবসায় একটু লাভ হয়, তখন আমাদের মনে মনে একটা পরিকল্পনা তৈরি হয়।
এই টাকা খাবারের খাতে দেব, ওই টাকা সেভ করব, আরেকটা অংশ জরুরি খরচের জন্য রাখব।

কিন্তু সপ্তাহ খানেক যেতেই কোথা থেকে যেন অপ্রত্যাশিত খরচ এসে পড়ে। ফলাফল,সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ২০-২৫ তারিখ পেরোতে না পেরোতেই হাত একদম ফাঁকা।

তাহলে উপায় কী? টাকা ধরে রাখতে হলে কী করতে হবে?

নিচের এই 5টি অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি টাকা ধরে রাখতে শিখে যাবেন এবং আপনার অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে।


১. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

চিন্তা ও হতাশা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় খরচের কারণ হয়। তাই নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা খুব জরুরি।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করতে হলে আপনাকে যোগব্যায়াম, সকালে হাঁটা এবং পজিটিভ মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আসলে এই সমাজে যেসব জিনিস আমরা এড়িয়ে চলি, সেগুলিই আমাদের উপকারে আসে।
বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো নেতিবাচক অনুভূতি।
লোকেরা আপনাকে সব সময় নেতিবাচক কথা বলবে, আর সেই পরিবেশেই আপনার মনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তাই এগুলো থেকে বাঁচতে আপনাকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে নিজের কাছে।

২১ দিনের চ্যালেঞ্জ নিন:
১. প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে বই পড়ব – যাই হোক না কেন, টানা ২১ দিন
২. টানা ২১ দিন, দিনে ১৫ মিনিট করে যোগব্যায়াম করব
৩. টানা ২১ দিন, প্রতিদিনের রুটিন বানিয়ে কত খরচ করি সেটা মেন্টেইন করব

২. দীর্ঘমেয়াদী আয়ের দিকে লক্ষ্য রাখুন

শুধু এখন কত টাকা ইনকাম করছেন সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ভবিষ্যতের আয়ের রোডম্যাপ। লং-টার্ম ইনকাম সোর্স গড়ে তুলুন।

সব সময় মানুষ চেষ্ট করে তাড়াতাড়ি বেশি টাকা রোজগার করতে। এটা ভুল না, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেটা রোজগার করছেন, সেটা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন।

যদি আপনি জীবনে টাকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে সেই টাকাকে হিসাব করে অ্যাসেট-এ রূপান্তর করুন। যেমন:

  • আপনি একটি জমি কিনলেন, যার দাম এখন ২ লাখ টাকা। ১০ বছর পর সেটার দাম ১০-১৫ লাখও হতে পারে।

  • কিছু কোম্পানির শেয়ার কিনলে খুব অল্প দামে সেটা পরে অনেক বেড়ে যেতে পারে।

উদাহরণ: Bajaj Finance-এর শেয়ার ১৫-২০ বছর আগে ছিল ৪-৫ টাকা, এখন সেটা ৮৭৯ টাকা।

শেয়ার রিস্কি হতে পারে, কিন্তু ভালো কোম্পানি নির্বাচন করে আপনি সেটাকেই অ্যাসেট বানাতে পারেন।

মূল কথা: কম টাকা রোজগার কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো সিস্টেম মেনে না চলা।

৩. আয়কে আলাদা করুন

একটি আয়ের উৎস থাকলেও সেটিকে ভাগ করুন বিভিন্ন খাতে। যেমন: সেভিংস, খরচ, জরুরি তহবিল ইত্যাদি।

আপনার টোটাল ইনকামকে আলাদা করুন –
একটা জরুরি ফান্ড এবং একটা পরিবার খরচের ফান্ড।

জরুরি ফান্ড ভাগ করুন ৪ ভাগে:
১. সেভিংসে কিছু
২. মিউচুয়াল ফান্ডে কিছু
৩. ডিরেক্ট স্টকে কিছু
৪. বন্ডে কিছু

পারিবারিক খরচ ভাগ করুন ৩ ভাগে:
১. চিকিৎসা
২. খাবার
৩. শপিং

এভাবে ইনকামকে ভাগ করলে আপনি ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো আর্থিক অবস্থা তৈরি করতে পারবেন।

৪. প্রতিদিন ‘ফিনান্স’ বিষয়ক বই পড়ুন

প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট করে অর্থনৈতিক শিক্ষা দেয় এমন বই পড়ুন। এতে টাকা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।

বিশ্বের সফল ব্যবসায়ীরা সবসময় বই পড়েন।
বইয়ের মধ্যেই লুকানো থাকে অনেক কৌশল।

আমাদের মনের দুটি দিক – সচেতন ও অবচেতন। সচেতন মন যা ভাবে, অবচেতন মন সেটাকেই গ্রহণ করে। তাই অবচেতন মনকে উন্নত করতে হলে বই পড়া দরকার।

৯০ দিনের চ্যালেঞ্জ নিন
প্রতিদিন একটু করে বই পড়বো, ভালো না লাগলেও পড়বো।
৯০ দিন পর আপনি বুঝবেন আপনি নিজেই পরিবর্তন হয়ে গেছেন।

৫. সফলদের অনুসরণ করুন

যারা আগে থেকেই মানি ট্র্যাকিং করেন, তাদের কাছ থেকে শিখুন। তারা কীভাবে বাজেট করে, কিভাবে ইনকাম ট্র্যাক করে – সেটা দেখুন ও তাদের কে কপি করুন।

সফল মানুষ মানে শুধু টাকা আছে – সেটা না।
সফল তারা, যাদের হাতে টাকা আছে, আবার সময়ও আছে।

একটি সাধারণ সমস্যা:

  • কারও হাতে টাকা আছে কিন্তু সময় নেই

  • আবার কারও হাতে সময় আছে কিন্তু টাকা নেই

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ১০-১৫ বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। সফলদের অভ্যাস কপি করুন, যেমন:

তাঁরা কী করেন, কীভাবে চিন্তা করেন – ঠিক তেমনভাবে চলুন।

বোনাস টিপস:

  • Google Pay / PhonePe কম ব্যবহার করুন

  • যতটা সম্ভব ক্যাশে লেনদেন করুন
    কেননা, ক্যাশ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন টাকা খরচ করছেন
    আর ডিজিটাল পেমেন্টে সেই বোধটা আসে না, ফলে বেশি খরচ হয়ে যায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন