মানুষের হাতে টাকা টেকে না কেন

কেন মানুষের হাতে টাকা টেকে না? সত্যিই কি আপনার জানা আছে? যদি না জানেন, তাহলে এখনই জানুন StockmarketWealth থেকে।

মানুষের হাতে টাকা টেকে না - এর কারণ হলো আমরা নিজেরাই।

যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, টাকার সাথে আপনার সম্পর্কটা কী? আপনি কি সত্যিই কোনো উত্তর দিতে পারবেন? বেশিরভাগ মানুষই পারবেন না। কারণ আমাদের মাথায় শুধু একটা জিনিস ঢুকে গেছে – টাকা। আমরা মনে করি বেশি টাকা মানেই আরামদায়ক জীবন। আসলে এটা একটা ধারণা। যার কাছে সামান্য টাকা আছে, সেও একই ধারণা পোষণ করে। তাই টাকার এই গুরুত্ব অনেক সময় একটা ভ্রম (ইলিউশন) ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাধারণ মানুষ” বলতে আমরা কাদের বুঝি। আমার দৃষ্টিতে, যারা কোনো বড় পদে নেই বা বিশেষ কোনো দায়িত্বে বাঁধা নয়-মানে যাদের প্রতিদিনের জীবন ৮ ঘণ্টার চাকরির সময়ের মধ্যে আটকে আছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজের চাপে ডুবে থাকে-তাদেরই আমি সাধারণ মানুষ বলব।

এখন আসি টাকাকে ধরে রাখার কথায়। অনেক সাধারণ মানুষই চান, টাকা যেন তাদের উপর কর্তৃত্ব না করে; বরং তারাই যেন টাকাকে নিজের মতো ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটা কীভাবে সম্ভব? চলুন দেখি, বাস্তবে এটা করার উপায় কী হতে পারে।

মানুষের হাতে টাকা টেকে না কেন – টাকার সাথে সম্পর্কের বাস্তব বিশ্লেষণ


টাকা কী?

টাকা হলো একটা বস্তু, যার কোনো নিজস্ব অস্তিত্ব নেই।

এটা যেমনভাবে আপনি ব্যবহার করবেন, ঠিক সেভাবেই কাজ করবে।

কখনো ভেবে দেখেছেন?

যদি আপনি টাকা রোজগার না করেন, তাহলে কীভাবে জীবন চালাবেন?

শুনতে কেমন লাগে, তাই না?

হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা। টাকা ছাড়া আমরা কিছু ভাবতেও শিখিনি।

কারণ টাকার ওপরই আমাদের জীবনযাপন নির্ভর করছে। তাই তো!

তাহলে একবার ভাবুন,

জীবনযাপন করতে গেলে শুধু কি টাকা থাকলেই সব মিটে যায়?

এখন যদি আমি আপনাকে প্রশ্ন করি -

কাল থেকে পৃথিবীতে কোনো খাবার তৈরি হবে না,

তাহলে আপনি কী ভাববেন? একবার ভেবে দেখুন।

হ্যাঁ, এবার টাকার কথা ভুলে আপনি খাবারের কথা ভাবছেন।

সুতরাং বুঝলেন তো, টাকার সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের একটা মূল্য নির্ধারণ করে আমাদের সমাজ চলছে।

তাই টাকা যেমন দরকার, তেমনি আমাদের বেঁচে থাকতে গেলে খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিসও দরকার।তাই এর একটা ভারসাম্য (Balance) থাকা জরুরি।

বর্তমানে কী হয়েছে?এই টাকা হাতে আসার স্রোত কমে গেছে মানুষের হাতে,

আর এর জন্য মানুষ নিজেই দায়ী।

অনেকে টাকার ব্যবহার ও টাকার মনোবিজ্ঞান জানে না-তাই ক্যাশ-ফ্লো শিখতে হবে।

ক্যাশ ফ্লো (Cash Flow) কী?


সহজ ভাষায় বললে — আপনি কাজ করুন বা না করুন, এমন একটা সিস্টেম যেখানে দিয়ে টাকা নিজে নিজেই তৈরি হয়, সেটাকেই বলে ক্যাশ ফ্লো (Cash Flow)
বেশিরভাগ মানুষের এই ক্যাশ ফ্লো থাকে না। কারণ তারা জানেই না, কীভাবে একটা টাকার প্রবাহ (money flow system) তৈরি করতে হয়। অনেকে ভাবে, এর জন্য অনেক টাকা দরকার - আসলে তা নয়।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে সাধারণ মানুষের জন্য ক্যাশ ফ্লো তৈরি করা সহজ নয়। কারণ এর পথে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ বা বাধা আসে। আগে জেনে রাখুন, কী কী চ্যালেঞ্জ আপনার সামনে আসতে পারে

 ক্যাশ ফ্লো তৈরি করতে যেসব চ্যালেঞ্জ আসে

১. লোন নির্ভর জীবন:
যেগুলোর পেছনে আপনি লোন নিয়ে ব্যবহার করেন (যেমন-বাইক, ফোন, সাজসজ্জা ইত্যাদি), সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। নিজের কাছে একটা কমিটমেন্ট করুন - “আমি ঋণ নিয়ে জীবন চালাব না।”
২. ছোট খরচের ফাঁদ:
বাইরে বের হলে চা, সিগারেট, গাড়িভাড়া, ছোটখাটো খরচ—এইগুলো একসাথে যোগ করলে আপনি বুঝবেন কত অপ্রয়োজনীয়ভাবে টাকা নষ্ট হচ্ছে।
৩. পরিকল্পনার অভাব:
স্যালারি পেলেই অনেকে ভাবে “আরে, এখন অনেক টাকা!” কিন্তু কোনো প্ল্যান ছাড়াই খরচ শুরু করে দেয়। ফলে মাস শেষে হাত খালি।
৪. সোশ্যাল মিডিয়ার প্রলোভন:
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের বিজ্ঞাপনগুলো এমনভাবে তৈরি, যাতে আপনি লোভে পড়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলেন। এই প্রলোভন থেকে বাঁচতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলেই আপনি ধীরে ধীরে নিজের জন্য একটা স্মার্ট ক্যাশ ফ্লো সিস্টেম তৈরি করতে পারবেন।

 ক্যাশ ফ্লো তৈরি করবেন কীভাবে?

আপনি যতই কম রোজগার করুন না কেন, আপনার টাকাকে একটা পাইপলাইন সিস্টেমে ঢোকাতে হবে, যেখান থেকে টাকা আসতেই থাকবে।
এর মানে, আপনি ধীরে ধীরে এমন জায়গায় টাকা রাখবেন যেখানে সেটা বাড়তে থাকবে। যেমন —
SIP (Systematic Investment Plan)
Bond
Equity
Real Estate
এই জায়গাগুলোতে ছোট ছোট করে ইনভেস্টমেন্ট শুরু করুন।
 উদাহরণ: মাসে ১০,০০০ টাকা আয় করলে কী করবেন?

ধরা যাক, আপনি মাসে ১০,০০০ টাকা উপার্জন করেন। পরিবারে ৩–৪ জন সদস্য আছে। এখন দেখি, কীভাবে ক্যাশ ফ্লো তৈরি করা সম্ভব

খরচের ধরনটাকার পরিমাণরেশন / বাজার৫,০০০ টাকাইলেকট্রিসিটি বিল৫০০ টাকাবাইরের হাতখরচ১,৫০০ টাকামোট খরচ:৭,০০০ টাকা

এখন বাকি ৩,০০০ টাকা কিভাবে ব্যবহার করবেন 

Equity (শেয়ার মার্কেট) – ₹১,০০০

ETF (Exchange Traded Fund) – ₹৫০০

Savings / Emergency Fund – ₹১,৫০০

এই নিয়ম টানা ১০ বছর চালিয়ে যান।

দেখবেন, ১০ বছর পর এই ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট থেকেই একটা বড় অঙ্কের ক্যাশ ফ্লো তৈরি হবে। তখন আপনার হয়তো চাকরি করার প্রয়োজনই পড়বে না।

তবে একটা কথা মনে রাখবেন - নিয়ম মানা সহজ নয়। এটা একটা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ জিততে পারলে জীবনটাই বদলে যাবে।

অ্যাসেট (Asset) কী?

অ্যাসেট মানে যে জিনিস আপনার পকেটে টাকা এনে দেয়, আপনি কাজ করুন বা না করুন।

সমাজে আমরা দেখি -

কারও কাছে টাকা আছে, কিন্তু সময় নেই।

আবার কারও কাছে সময় আছে, কিন্তু টাকা নেই।

ভাবুন তো, এমন কেউ কি আছে যার কাছে টাকাও আছে, সময়ও আছে?

হ্যাঁ, আছে - তারা হলো অ্যাসেট মালিকরা।

অ্যাসেট এমন কিছু জিনিস যা আপনাকে কাজ না করেও আয় এনে দেয়।

যেমন -

Equity Market (শেয়ার মার্কেট)

Mutual Fund

Real Estate

Dividend Paying Shares

শেয়ার মার্কেটে ১ টাকার স্টক থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকার স্টক পর্যন্ত পাওয়া যায়। আপনি যেমন সামর্থ্য রাখেন, সেভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন।

এই শেয়ারগুলোকে অনেকেই বলে “Penny Stocks” -যেগুলো থেকে ছোট ইনভেস্টমেন্টেও বড় রিটার্ন আসতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে প্ল্যান করেন।

ক্যাশ ফ্লো মানে শুধু টাকা উপার্জন নয়, বরং এমন এক স্মার্ট সিস্টেম তৈরি করা, যা আপনার জন্য কাজ করবে — এমনকি আপনি বিশ্রাম নিলেও।

আজ থেকেই ছোট করে শুরু করুন। ক্যাশ ফ্লো


এটা সহজ ভাষায় বললে এরকম হবে - আপনি কাজ করুন অথবা না করুন, এমন একটা সিস্টেম যেখান থেকে টাকা তৈরি হয়। আর এই টাকা তৈরির ফ্লো তাকেই ক্যাশ ফ্লো বলে। বেশিরভাগ মানুষের এই ক্যাশ ফ্লো নাই, অর্থাৎ তারা জানে না কীভাবে ক্যাশ ফ্লো জিনিসটা তৈরি করতে হয়। এই ক্যাশ ফ্লো তৈরি করার জন্য যে বেশি টাকা লাগবে, সেটা কিন্তু নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এটা একটা কঠিন ব্যাপার সাধারণ মানুষের জন্য, কারণ তাদেরকে এটা তৈরি করতে গেলে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আগে জেনে রাখুন, কী কী চ্যালেঞ্জ আপনারা সামনে পেতে পারেন — আপনারা কিছু জিনিস

১. যেগুলোর পিছনে আপনারা লোন নিয়ে ইউজ করেন, সেইগুলো করা যাবে না, নিজের কাছে কমিটমেন্ট করুন।

২. বাইরে যখন আপনারা বের হন তখন কিছু ছোট ছোট খরচ, যেমন চা খাওয়া থেকে সিগারেট, গাড়িভাড়া - সব মিলে যদি হিসাব করেন আপনি কি ফালতু খরচা করছেন সেটা আপনারা বুঝতে পারবেন।

৩. স্যালারি পাওয়ার সাথে সাথে আপনাদের কোনো প্ল্যান থাকে না, সঠিকভাবে যে টাকা কীভাবে ব্যবহার করবেন।

৪. বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম আপনাদের কাছে লোভনীয় জিনিস কেনার জন্য অনেক সহজ রাস্তা তৈরি করে দেবে, সেইগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

এই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা ফেস করি, এইগুলো থেকে বাঁচতে হবে।

এবার আসি ক্যাশ ফ্লো মানে টাকার প্রবাহ কীভাবে বানাবেন - অনেক মাধ্যম আছে। যেমন আপনি যত কম রোজগার করুন না কেন, আপনার টাকা পাইপলাইন কনভার্ট করে দিতে হবে — যেমন এসআইপি, বন্ড, ইকুইটি, রিয়েল এস্টেট -এইসব জায়গায় ছোট ছোট করে ইনভেস্টমেন্ট করা শুরু করুন।

একটা উদাহরণ দিয়ে বলি এইগুলো কীভাবে সম্ভব -আপনি ভাবছেন মাসে ১০,০০০ টাকা রোজগার করেন।

চলুন এই হিসাবে আসি। এখন ধরুন আপনার ফ্যামিলি মেম্বার ৩ বা ৪ জন, তাহলে কীভাবে সম্ভব হতে পারে?

চলুন দেখা যাক - আপনার ফ্যামিলি কস্ট এখানে ৭০০০ টাকার মধ্যে রাখবেন, রেশন এর জন্য ৫০০০, ইলেকট্রিসিটি বিল ৫০০, আর ১৫০০ আপনার বাইরের হাত খরচ। আর বাকি ৩০০০ কী করবেন — ইকুইটি ১০০০, ইটিএফ ৫০০ টাকা, আর সেভিং-এ ১৫০০ টাকা - এটা ইমার্জেন্সি ফান্ড হিসেবে রাখুন। আর এটা কন্টিনিউ ১০ বছর মেইনটেইন করুন। দেখবেন ১০ বছর পর আপনার এই ইনভেস্টমেন্ট থেকে একটা বড় পরিমাণ টাকা ক্যাশ ফ্লো তৈরি হয়েছে, আর আপনার জব করার দরকার পড়বে না। একটা মেইনটেইন করা কিন্তু এতটা সহজ নয়, তাই এটা আপনাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। এইগুলো যদি করেন তাহলে আপনি টাকা হাতে ধরে রাখতে পারবেন - এটা হলো একটা সিস্টেম। বেশিরভাগ মানুষ এই সিস্টেমের বাইরে আছে, তাই তারা টাকা ধরে রাখতে পারে না।

অ্যাসেট অর্থাৎ সম্পত্তি কী

অ্যাসেট হলো সেই সমর্থ বস্তু, যা আপনার পকেটে টাকা এনে দেয় - আপনি কাজ করুন অথবা না করুন। দেখবেন সমাজে কী হয় - অনেক বড় দুটি সমস্যা আছে: যার টাকা আছে তার কাছে সময় নাই, আর যার সময় আছে তার কাছে টাকা নাই। তাহলে কি এরকম মানুষ দেখেছেন, যার কাছে টাকা ও সময় দুটোই আছে? হ্যাঁ, একটা মাত্র জায়গায় এটা সম্ভব - সেটাই হলো অ্যাসেট।

যদি আমি আপনাকে কিছু অ্যাসেটের উদাহরণ দিই - যেমন ইকুইটি মার্কেট, শেয়ার, যার দাম ১ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আপনি যেমন সামর্থ্য, সেরকম কিনতে পারেন। মার্কেটে এগুলোকে পেনি স্টক বলা হয়। যদি আপনারা এই পেনি স্টক ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করে ইনভেস্টমেন্ট করতে পারেন, তাহলে একটা ভালো সুযোগ বানিয়ে নিতে পারবেন।

যেখানে আমি আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি - আমি আরভিএনএল স্টকে ইনভেস্টমেন্ট করেছিলাম, যেখানে তখন দাম ছিল ৬০ টাকা, আর সেটা পরবর্তীতে দাঁড়িয়ে যায় ৬০০ টাকায়। আমি কীভাবে স্টক সিলেকশন করতাম সেটা আমি বলি - আমি ওয়ারেন বাফেটের চিন্তাভাবনাকে কপি করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, “যে কোম্পানিটাকে তুমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাও, আর যার সম্পর্কে জানো, সেই কোম্পানিতে ইনভেস্ট করো।” আমি সেটাই করেছিলাম, কারণ আমি যখন সকালে উঠে অফিসে যেতাম, দেখতাম আরভিএনএল ব্রিজ কনস্ট্রাকশনের কাজ খুব তড়িঘড়ি করে হচ্ছে। তাই আরেকবার কোম্পানির ব্যালান্সশিটের দিকে তাকিয়ে দেখি, যে কোম্পানি লাগাতার অর্ডার পাচ্ছে, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ওই কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবো। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ৬০,০০০ টাকা দিয়ে ৬০ টাকার দামে আরভিএনএল স্টক তুলেছিলাম। তখন প্রায় ২ বছর লাগাতার রেখেছিলাম। তখন দেখি ২ বছর পর সেটার দাম ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যদিও আমি একটা বড় ভুল করেছিলাম - আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল। আমি ২০০ টাকায় যখন দাম যায়, তখন সেটাকে বিক্রি করে দিই, যার মার্কেট ভ্যালু দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ টাকায়। তখনই আমার আফসোস হচ্ছিল যে ৪ লাখ টাকা আমি লস করেছি। এর থেকে আমি একটা বড় শিক্ষা পেয়েছি যে অ্যাসেট অর্থাৎ যেখান থেকে আমার ক্যাশ ফ্লো তৈরি হচ্ছিল, সেই জায়গাটা আমি নষ্ট করেছি। তাই আপনারা যেন এরকম ভুল না করেন - তাই আপনাদেরকে এটা পরে বুঝতে হবে অ্যাসেট কী হয়। সব সময় আমাদের মানসিকতার সাথে খেলা করে। তাই যখন আপনার মনে হবে বা আপনি ফাইন্যান্সিয়াল প্রোবলেমে পড়বেন, তখন দেখবেন যেন আপনার অ্যাসেটে কোনো রকম আঘাত না পড়ে। নিজের কাছে কমিটমেন্ট করুন - এই ভুল আপনারা করবেন না, কারণ পৃথিবীর প্রায় ৮০% মানুষ যারা আছে তারা এই ক্যাশ ফ্লোর মধ্যে নাই, বাকি ২০% মানুষ এই ক্যাশ ফ্লো-র ওপর নির্ভর করে টাকার ওপর টাকা বানিয়ে চলছে। তাই আমার ভিশন হলো — যাতে সাধারণ মানুষ, যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ফাইন্যান্সিয়াল ফ্রিডম থেকে পিছিয়ে আছে, তাদের সেই অন্ধকার থেকে তুলে আনা। কি, আপনারা পারবেন তো?

সাইকোলজি অফ মানি

টাকার মনোবিজ্ঞান - যেখানে বুঝতে হবে টাকা কীভাবে কাজ করে সেটা আপনাদেরকে শিখতে হবে। কীভাবে আপনারা টাকা কাজ করে, টাকার সিস্টেমে কাজ করে, যেখানে আপনার চিন্তাভাবনা, কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবে - এটা একটা ভুল ধারণা। যদি আপনারা অটোমেটেড সিস্টেম তৈরি করেন টাকার আসার, তাহলে আপনার কাছে টাকা ধরা দিতে বাধ্য থাকবে। কীভাবে? কারণ টাকা আসে মানুষের ইমোশন কন্ট্রোল থেকে। আমরা যা করি, সায়েন্স বলে, সেটা আমাদের ইমোশনের ওপর নির্ভর করে। একটা জিনিস খেয়াল করবেন - আমরা কী করি, যখন হাতে টাকা আসে, তখন আমাদের মাথায় যে চিন্তাভাবনাগুলো তৈরি হয়, তা হলো নতুন নতুন ছোট স্বপ্ন। যেমন - একদম সাধারণ মানুষ যা করে, একটা টিভি কিনি, একটা ফ্রিজ কিনি, একটা জামাকাপড় পছন্দ হয়েছে সেটা কিনি। আর এইসব চিন্তাভাবনাগুলো মাথায় তৈরি হয়, যেখানে টাকা আসার সাথে সাথে এইসব জিনিসগুলো মাথায় আসে। তাই আমরা যা করি, সেই জিনিসের প্রতি মায়া বা ভালোবাসা পড়ে যাই। আসলে একটা সিস্টেমেটিকালি তৈরি করা হয় যেখানে আপনার ধ্যান সেইসব ছোটখাটো জিনিসের প্রতি থাকে। তাই এইসব জিনিস থেকে কোনোদিন টাকা আসবে না - এগুলো হলো লাইবিলিটিজ। তাই এই চিন্তাভাবনা থেকে লড়াই করতে হবে আপনাদেরকে। তাই যতক্ষণ আপনি এই জিনিসগুলো থেকে জিততে পারবেন না, ততক্ষণ আপনি ক্যাশ ফ্লো তৈরি করার পর্যায়ে যেতে পারবেন না। কারণ এইসবগুলো আমার সাথেও ঘটেছিল। আমি বুঝি কী হয় — বহু বছর আমি এইসব জিনিসের ওপর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না। যখনই হাতে টাকা আসে, তখনই দেখি কোনো না কোনো দিক দিয়ে আমার হাত থেকে টাকা সরে যাচ্ছে এইসব জিনিসের ওপর দিয়ে। তাই আমি বহু বছর এই ক্যাশ ফ্লো তৈরি করা থেকে পিছিয়ে পড়েছিলাম এবং টাকা হাতে এসেও কিছুতেই হাতে থাকছিল না। আর ঠিক এই কারণেই মানুষের হাতে টাকা থাকে না। তাই সব সময় ফাইন্যান্স সম্পর্কে বুঝতে গেলে শিখুন, এইসব বই পড়ুন - নতুন নতুন। যেখানে কী হবে, আপনার মাথায় এরকম একটা জায়গা তৈরি হবে যে আপনি এই সমাজের ফাঁদ থেকে লড়তে পারবেন। আর যখন আপনি এইসব জিনিসগুলো করবেন, তখন আপনার পিছনে লোন, বড় বড় ব্যাংক আপনার পিছনে পড়বে, বড় বড় পুঁজিপতি আপনার পিছনে পড়বে - যেখানে দেখবেন যে এই চিন্তাভাবনা আপনার মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। এরা কী করে? আপনাকে খুব সূক্ষ্মভাবে এই কাজটা করে - যেমন আপনাকে লোন অফার করা, ক্রেডিট কার্ড অফার করা, আরো নানা রকমভাবে বিভিন্ন লোভনীয় জিনিস আপনার সামনে তুলে ধরা - যাতে আপনার মাথা তাদের সিস্টেমে ঢুকে যায়। একটা বাস্তব জিনিস আপনারা ফলো করে দেখবেন - যে যখন আপনাদের প্রয়োজন, মোবাইল যেটা আপনারা বেশি ইউজ করেন, সবসময় যেটা আপনারা ভাবেন, ঠিক সেইরকম অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আপনার সামনে আসে। এটা ভালো করে ফলো করে দেখবেন। সবার শেষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। আমি একটা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি - কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? ১ প্যাকেট বাদাম কিনুন ১০ টাকার দামে, সেটা এক মাস ধরে খাওয়া প্র্যাকটিস করুন। দেখবেন এটা এত সহজ নয় যে আপনি তাড়াতাড়ি এটা করতে পারবেন।

হ্যাবিট প্রবলেম

কি হয়, আমরা ছোটবেলা থেকে এরকম একটা প্রবলেমে ফেঁসে আছি - যেখানে কী হয়, সাধারণ মানুষ জন্ম নেয়, তার ফ্যামিলি থেকে একটা অভ্যাস তৈরি করা হয়, যেটা তার একটা প্যাটার্ন হিসেবে সারাজীবন থেকে যায়। তাই যখন তার সেই অভ্যাসের প্রতি একটা প্যাটার্ন তৈরি করে নেয়, সেটা বড় হয়ে আর পাল্টানো খুব কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে আমাদের সেটা পাল্টাতে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আমি চেষ্টা করেছিলাম - যতবার বার মানসিক দিক দিয়ে তৈরি হয়েছি, ততবার কোনো না কোনো অজানা শক্তি, যে সিস্টেম তৈরি করা, সেটা আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার পরও আমি লড়েছি। এই মনোভাবের ওপর আমি টাকা আসার কোনো সিস্টেম তৈরি করতে পারছিলাম না - শুধু এই মনোভাব না পাল্টানোর জন্য। তাই যতক্ষণ না আপনারা এই মনোভাব পাল্টাচ্ছেন, ততক্ষণ আপনারা এই টাকা হাতে ধরে রাখতে পারবেন না।

ছোট ছোট খরচ

ছোট ছোট খরচ, যেগুলো আমাদের কাছে গুরুত্ব হারায়, যার মাসুল আমাদেরই দিতে হয়। আমি সিগারেট, মদ, গাঁজা, সিগার, তামাক - এক সময় ভীষণ খেতাম, যার কোনো হিসাব ছিল না। কিন্তু যেদিন হিসাব করা শুরু করলাম আর বুঝলাম যে এগুলোর গুরুত্ব কতটা, তখন চিন্তা করলাম একবার হিসাব করে দেখি - ধরুন সিগারেট ৮ টাকা, গাঁজা ১০ টাকা, এইভাবে ১৭০ টাকা, এরচাড়া চা, রাস্তায় বেফালতু গাড়িভাড়া - সবজুড়ে প্রায় ২৫০ টাকা করে খরচ করে ফেলছি, যেটা মাসে ৭৫০০ টাকা হয়, আর বছরে ৯০,০০০ টাকা! যার হিসাব মাথায় চড়ে বসেছিল। তখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই টাকা আমার কোনো অ্যাসেট তৈরি করতে কাজে লাগাতে হবে, কারণ এই অ্যাসেটই আপনার ক্যাশ ফ্লো তৈরি করবে।

প্যাসিভ ইনকাম এর গুরুত্ব

প্যাসিভ ইনকাম কী? কাজের ফাঁকে এমন কিছু কাজ করা, যেখান থেকে এক্সট্রা ইনকাম আসে। যেমন — বিভিন্ন রকম হাতের কাজ, যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, বিভিন্ন রকম সার্ভিস থেকে শুরু করে বিনুনি, ছোটখাটো কাজ যেগুলো সাধারণ মানুষের কাজে আসে — এইগুলো শিখে গেলে আপনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক্সট্রা আয় করতে পারবেন। এবং সেই টাকা আপনার ডেইলি লাইফের অ্যাসেটকে রক্ষা করবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন