Causes of Overtrading (ওভারট্রেডিং এর কারণ)

Overtrading আসলে এমন এক ফাঁদ, যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের ঠেলে দিই। StockMarketWealth থেকে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।

 

ওভারট্রেডিং: সাধারণ ট্রেডারদের সবচেয়ে বড় ভুল এবং এর সমাধান


Stock market screen – Causes of Overtrading (ওভারট্রেডিং-এর কারণ)

আজকের দিনে প্রযুক্তি যত উন্নত হয়েছে, শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং ততটাই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। এখন সাধারণ রিটেইল ট্রেডারদের সামনে শুধু অন্য ট্রেডারই নয়, বরং মেশিন–অ্যালগো ট্রেডিংয়ের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীও আছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে পুরোনো এবং সাধারণ একটি সমস্যা হলো ওভারট্রেডিং

রিটেইল ট্রেডারদের মধ্যে হার না মানার প্রবণতা খুব বেশি। অনেকেই ট্রেডিংকে ব্যবসা নয়, বরং এক ধরনের গেম হিসেবে দেখে। তারা ভুলে যায় যে প্রতিটি ট্রেডের পেছনে খরচ আছে। ধরুন, একটি বাই–সেল মিলিয়ে অন্তত ৫০ টাকা খরচ হয়। দিনে ৫ বার ট্রেড মানে ২৫০ টাকা, মাসে গড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৫০০ টাকা। যা একটি ছোট পরিবারের মাসিক খরচের সমান! অথচ বেশিরভাগই এসব হিসাব মাথায় রাখে না। তাই ওভারট্রেডিংয়ের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিজের মূলধন নষ্ট করে ফেলে।

চলুন এবার বিস্তারিত দেখি-

ওভারট্রেডিং আসলে কী

কেন সাধারণ ট্রেডাররা এই ভুল করে

মানসিক দিকগুলো

এবং সমাধানের উপায়

ওভারট্রেডিং কী?

ওভারট্রেডিং মানে হলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ট্রেড নেওয়া। অর্থাৎ, কোনো পরিকল্পনা বা সঠিক কৌশল ছাড়া, শুধু আবেগ বা তাড়াহুড়োর কারণে বারবার মার্কেটে এন্ট্রি নেওয়া।

উদাহরণস্বরূপ: আপনি ঠিক করলেন একটি ট্রেড নেবেন এবং স্টপলস হিট হলে সেদিন আর ট্রেড করবেন না। কিন্তু স্টপলস হিট হওয়ার পর আবার ভেবে নিলেন, আরেকটা ট্রেড নিলে হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। এভাবে বারবার চেষ্টা করতে করতে হয়তো দিনে ১০–১২টা ট্রেড নিয়ে ফেললেন। এই প্রবণতাই আসলে ওভারট্রেডিং।

কেন সাধারণ মানুষ ওভারট্রেডিং করে?

১. দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ

অনেক বিজ্ঞাপন ও তথাকথিত অ্যাডভাইজাররা এমনভাবে প্রলুব্ধ করে যেন মনে হয় বেশি ট্রেড মানেই বেশি লাভ। ফলে নতুন ট্রেডাররা ভাবে, যত বেশি মার্কেটে ট্রেড করবে, তত দ্রুত ধনী হবে।

২. লস রিকভার করার চেষ্টা

যখনই লোকসান হয়, তখন মনে হয় যেভাবেই হোক সেটা তুলতে হবে। তাই আবার ট্রেড নেয়, আবার লস হয়, আবার ট্রেড করে। এই লুপ থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. মার্কেটে অ্যাকশন দেখতে ভালো লাগে

অনেকে শেয়ার বাজারকে সিরিয়াস ব্যবসা না ভেবে গেমের মতো দেখে। তাই তাদের কাছে ট্রেড মানে উত্তেজনা, খেলা, যুদ্ধ। এর ফল হয় মূলধনের ক্ষতি।

৪. ডিসিপ্লিনের অভাব

বেশিরভাগ ট্রেডারের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা শৃঙ্খলা নেই। আবেগে ভেসে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এটাই মূল কারণ।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া ও টিপসের ফাঁদ

আজকাল ইউটিউব, টেলিগ্রাম, টিভি—সব জায়গায় "প্রফিটেবল স্ট্র্যাটেজি" নামে প্রচুর ভিডিও ভেসে বেড়ায়। এগুলোর অনেকটাই অবাস্তব। রিটেইল ট্রেডাররা এগুলো দেখে নিজের বিশ্লেষণ ছাড়াই ট্রেড করে বসে। মনে হয়, যদি না করি তবে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

ওভারট্রেডিংয়ের মানসিক প্রভাব

ডোপামিন আসক্তি

প্রথম ট্রেডে সামান্য লাভ হলে মাথায় ডোপামিন রিলিজ হয়, যা আপনাকে আরও ট্রেড নিতে প্রলুব্ধ করে। ঠিক যেমন বিজ্ঞাপনে মানুষ পণ্য কিনতে বাধ্য হয়, তেমনি ট্রেডারও লোভে পড়ে যায়।

ভয় আর লোভ

সবুজ ক্যান্ডেল দেখলেই লোভ বাড়ে, লাল ক্যান্ডেল দেখলেই ভয়। এই আবেগগুলো ওভারট্রেডিংয়ের মূল চালক।

স্ট্রেস ও অনিদ্রা

বেশি ট্রেড মানেই বেশি চাপ। রাতে ঘুম ভাঙে চার্ট আর ক্যান্ডেলের কথা মনে করে। পরের দিনও কোনো পরিকল্পনা ছাড়া আবার ট্রেড নেয়া শুরু হয়।

ফ্যামিলি লাইফে প্রভাব

অতিরিক্ত লস হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।

বাস্তব উদাহরণ

যখন প্রথম স্টক মার্কেটে আসি, ছোট ছোট লাভ করতে পেরে ভীষণ খুশি হতাম। ভাবতাম চাকরি করে দিনে ৭০০–৮০০ টাকা আয় হয়, আর ট্রেডিং করে ১০০০ টাকা পাচ্ছি! ধীরে ধীরে লোভ বাড়তে লাগলো। ১০০০ টাকার পর ২০০০, তারপর আরও বড় কুয়ান্টিটি নিয়ে বারবার ট্রেড করতাম।

একসময় দেখলাম লাভ নয়, বরং ২০০০, ৩০০০, ৫০০০—এমনকি ৮০০০ টাকা পর্যন্ত লস হচ্ছে। এই লস তুলতে আরও বেশি ট্রেড করতে লাগলাম। শেষে যখন ক্যাপিটাল শেষ হয়ে গেল, তখন বুঝলাম আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি।
আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল-ওভারট্রেডিং।

ওভারট্রেডিং এড়ানোর উপায়

১. ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন

নিজেকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনুন। আগে থেকে ঠিক করুন কোথায় এন্ট্রি নেবেন, কোথায় এক্সিট করবেন। পরিকল্পনা ছাড়া ট্রেড করবেন না।

২. স্টপ লস ব্যবহার করুন

প্রতিটি ট্রেডে স্টপলস থাকা বাধ্যতামূলক। সাপোর্ট লেভেলের নিচে অন্তত ১-২% জায়গা রেখে দিন।

৩. ট্রেডিং জার্নাল রাখুন

প্রতিদিনের ট্রেড লিখে রাখুন। কোথায় ভুল হলো, কোথায় ঠিক হলো তা বিশ্লেষণ করুন। এটা আপনাকে উন্নত ট্রেডার বানাবে।

৪. লস মেনে নিন

ক্ষতি হলে সেটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিন। ট্রেডিং গেম নয়, এটা ব্যবসা। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লাফাবেন না।

৫. নির্দিষ্ট সময় ট্রেড করুন

সারাদিন চার্টে চোখ রাখবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে সুযোগ এলে তবেই ট্রেড করুন।

৬. সঠিক মানসিকতা গড়ে তুলুন

ট্রেডিংকে গেম নয়, ব্যবসা হিসেবে দেখুন। তখনই আপনি বাস্তব চিত্র বুঝতে পারবেন।

উপসংহার

ওভারট্রেডিং শুধু টাকা নষ্ট করে না, মানসিক শান্তি ও পারিবারিক জীবনও ধ্বংস করে। এটা এক ধরনের আসক্তি। তাই সময় থাকতে শিখতে হবে কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ডিসিপ্লিন মেনে চললে শুধু লাভই বাড়বে না, বরং জীবনের অন্যান্য দিকও উন্নত হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি হবেন স্ট্রেস–ফ্রি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন