ফিনান্সিয়াল গোল সেট করবেন
ফিনান্সিয়াল গোল সেট করা অনেক সাধারণ মানুষের কাছে একধরনের অচেনা বিষয় বলে মনে হয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা ফিনান্সিয়াল গোল বিষয়টি সম্পর্কে ঠিকঠাক বোঝেনই না।
যাই হোক, প্রথমেই নিজেকে একটা প্রশ্ন করুন:
আপনি কি টাকা রোজগার করতে চান?
সবাই-ই বলবে, "হ্যাঁ"।
কিন্তু সমস্যাটা হলো, অধিকাংশ মানুষের মাথায় এই সিস্টেমটা ঢোকে না যে,
টাকা তো সবাই রোজগার করে, করেই এসেছে, আজও করছে।
তবুও তারা জীবনে সফল হতে পারেনি।
কেন?
কারণ, তারা ফিনান্সিয়াল গোল বা অর্থনৈতিক লক্ষ্য ঠিক কী, সেটা বোঝে না। এজন্যই সফলতার অভাব।
তাই আসুন, আমরা শিখে নেই কীভাবে একটি ফিনান্সিয়াল গোল তৈরি করতে হয়।
ফিনান্সিয়াল গোল সেট করার ৫টি পরিকল্পনা ধাপ
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন (Set Clear Goals)
সবার আগে নিজেকে একটি প্রশ্ন করুন—
“আপনি কী চান?” এবং “কেন সেটা চান?”
যেটা আপনি সত্যিই চান, সেটার উপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী অ্যাফারমেশন (Affirmation) তৈরি করুন।
এই অ্যাফারমেশনটি প্রতিদিন শুনুন এবং নিজের ভিতরে বিশ্বাস গড়ে তুলুন।
"আমি প্রচুর টাকা কামাবো" — এটা কোনো লক্ষ্য নয়।
কারণ এটা অস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য নয়। বেশিরভাগ মানুষের মাথায় এই ভাবনাটাই ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু একটা সত্যিকারের লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত,
যেটা আপনি চোখের সামনে স্পষ্টভাবে দেখতে পান,
যেটা প্রতিদিন আপনার মনে ঘুরপাক খায়,
আর যেটার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে।
বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন,
যাতে প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
এইভাবেই একটি লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়।
২. সময়সীমা ঠিক করুন (Set a Time Frame)
আপনি যা চান, সেটা কত দিনের মধ্যে পেতে চান—সেই সময়সীমা এখনই নির্ধারণ করুন। তারপর সেই লক্ষ্য আর সময়সীমাকে আপনার ফোনের স্ক্রিনে লিখে ওয়ালপেপার বানিয়ে রাখুন।
📝 উদাহরণ: যদি আপনার লক্ষ্য হয় "আমি ১০০ কোটি টাকা আয় করব", তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—এই লক্ষ্য আপনি ৩ বছরে, ৫ বছরে, ১০ বছরে না ২০ বছরে অর্জন করতে চান?
আপনি যেটা ঠিক করবেন, প্রতিদিন সেই সময়সীমা অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে।
📌 মনে রাখবেন, যদি আপনি কম সময়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করতে চান, তাহলে আপনার অ্যাকশন প্ল্যান ও পরিশ্রম সেই অনুযায়ী হতে হবে।
সব কিছুই আপনার পরিকল্পনা, মনোভাব ও কাজের ওপর নির্ভর করবে।
৩. খরচের হিসাব করুন (Estimate the Cost)
সবারই জীবনে একটি করে লক্ষ্য থাকে। কেউ চাইছেন ধনী হতে, কেউ সফল ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু লক্ষ্য স্থির করার পরেও অনেকে সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন না। কেন? কারণ তারা ভুলে যান—নিজের বর্তমান আর্থিক অবস্থান কোথায় এবং সেই অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
🧭 লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন বর্তমান অবস্থা
ধরুন, আপনার লক্ষ্য হলো ১ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করা। এখন দেখা যাক আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন:
- আপনার মাসিক আয়: ₹২০,০০০
- বার্ষিক মোট আয়: ₹২,৪০,০০০
- দিনে আয়: প্রায় ₹৬৫০
এই আয় দিয়ে যদি আপনার পরিবার চলে এবং এক টাকাও জমানো সম্ভব না হয়, তাহলে ১ কোটি টাকার লক্ষ্যে আপনি প্রায় ৯৭.৬ লাখ টাকা পিছিয়ে আছেন। শুনতে কঠিন লাগছে, কিন্তু অসম্ভব নয়।
📊 সমস্যা বুঝুন – খরচের দায়িত্ব নিন
আপনার সামনে এখন দুটি পথ:
- খরচ কমান – মাসিক ২০,০০০ টাকার মধ্যে অন্তত ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করুন।
- অতিরিক্ত আয়ের রাস্তা তৈরি করুন – সেই অতিরিক্ত আয় দিয়ে সম্পদ তৈরি করুন।
🛠️ পরিকল্পনা করুন – ৩ মাস শিখুন, ৯ মাস কাজে লাগান
আপনার হাতে আছে ৩৬৫ দিন। তার মধ্যে:
- প্রথম ৩ মাস: শিখুন এমন কিছু যা আপনাকে বাড়তি আয় এনে দিতে পারে। যেমন:
- ব্লগিং
- এনএফটি ডিজাইন
- ফ্রিল্যান্সিং
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরি
- ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট তৈরি
- পরবর্তী ৯ মাস: স্কিলগুলো ব্যবহার করে একটি অ্যাসেট তৈরি করুন, যেমন:
- ব্লগ সাইট
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট
- NFT কালেকশন
- Freelancing ক্লায়েন্ট
📌 শেষ কথা: ১ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করতে চাইলে প্রচণ্ড পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা আর খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। নিজের সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। দিনের ৬–৮ ঘণ্টা বরাদ্দ করুন শিখতে ও কাজ করতে। আর প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিন:
“আমার লক্ষ্য আছে, আর আমি সেটার জন্য কাজ করছি।”
৪. সঞ্চয় ও বিনিয়োগের রোডম্যাপ বানান (Create a Savings & Investment Plan)
সঞ্চয় আর বিনিয়োগ মানে শুধু টাকা না, থাকার সাথে সাথে একটা জিনিস বুঝুন—সময়। এটাকে যতক্ষণ না আপনার জন্য কাজ করাবেন, ততক্ষণ আপনি সময়ের জন্য কাজ করেই যাবেন।
টাকা সঞ্চয়ের আগে আপনাকে সময় সঞ্চয় করতে শেখা দরকার। নিজেকে বিনিয়োগের মধ্যে দিন। টাকা শুধু একটা টুলস। কিন্তু আজ মানুষ হারিয়ে ফেলেছে এই সময়ের গুরুত্ব।
তাই আপনাকে আগে মাথায় রাখতে হবে—আপনার উদ্দেশ্য যেমন, আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী টাকা উপার্জন এমনভাবে করতে হবে, যাতে সাথে সাথে আপনার সময়ও সঞ্চয় হয়।
কারণ যাদের কাছে টাকা আছে, তাদের কাছে সময় নেই।
আর যাদের কাছে সময় আছে, তাদের কাছে টাকা নেই।
তাহলে আপনার রোডম্যাপ হবে সময় হিসেব করে—২৪ ঘণ্টায় কত রোজগার করতে পারবেন, সেই অনুযায়ী রুট।
যেমন: আপনি যদি দিনে ৫০০০ টাকা আয় করতে চান, তাহলে মাসে ১,৫০,০০০ টাকা আয় হবে। বছরে হবে ১৮ লাখ টাকা।
তাহলে এখন কী করতে হবে?
আপনার রোডম্যাপ এমন কিছু নিয়ে কাজ করুন যেটা থেকে ৭০০০ টাকা করে লাভ আসবে। যেমনঃ সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ১০০০ টাকায় কিনে ২০০০ টাকায় বিক্রি করুন। দিনে টার্গেট রাখুন ৭টা মোবাইল বিক্রি করবেন।
তাহলে আপনার ৭০০০ টাকা লাভ চলে আসবে। এর মধ্যে ২০০০ টাকা যাবে ফ্যামিলি খরচে আর ৫০০০ টাকা হবে আপনার টার্গেট এমাউন্ট।
এইভাবে যেকোনো রকমভাবে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার পরিকল্পনা।
৫. রিভিউ ও অ্যাডজাস্ট করুন (Review & Adjust Regularly)
প্রতিদিন আপনি যা করছেন, তা সবার আগে নিজের অবচেতন মনে পর্যালোচনা করুন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন —
"আজ আমি যা করলাম, তা কি আমাকে আমার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দিল?"
প্রতিটি মাস শেষে দেখে নিন, আপনি কতদূর এগিয়েছেন।
যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে বুঝে নিন কোথায় ঠিক করতে হবে —
পুনরায় শুরু করুন।
প্রতিটি ধাপে নিজেকে মূল্যায়ন করুনঃ
- ১৫ দিনে কতটা এগিয়েছেন?
- আপনার আর্থিক অবস্থা কতটা উন্নত হয়েছে?
- ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর — এই প্রতিটি সময় অন্তর নিজেকে রিভিউ করুন।
নিজেকে সেই লেভেলের মানুষ ভাবতে শিখুন, যেই লেভেলে আপনি পৌঁছাতে চান। মনকে সেভাবেই গড়ে তুলুন, কারণ আপনি যেমন ভাবেন, ধীরে ধীরে আপনি তেমনই হয়ে ওঠেন।