শেয়ার বাজারে যাবতীয় প্রশ্ন ও উত্তর — জানুন একসাথে
শেয়ার বাজার কী?
শেয়ার বাজার হলো এমন একটি বাজার, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানিকে ছোট ছোট অংশে (যাকে শেয়ার বা স্টক বলা হয়) ভাগ করে সেই অংশগুলো বিনিয়োগকারীদের মাঝে কেনাবেচা করা হয়। বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ার কিনে ঐ কোম্পানির আংশিক মালিক বা অংশীদার হয়ে যান।
শেয়ার কী?
শেয়ার হলো শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির একটি ছোট অংশ। আপনি যখন সেই কোম্পানির শেয়ার কেনেন, তখন আপনি ঐ কোম্পানির ঐ অংশের মালিক হয়ে যান।
কোম্পানিগুলো শেয়ার কেন বিক্রি করে?
কোনো কোম্পানি যখন তাদের ব্যবসা বড় করতে চায়, তখন তাদের টাকার প্রয়োজন হয়। সেই টাকা জোগাড় করতে কোম্পানিগুলো যেমন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে, তেমনি শেয়ার বাজারে শেয়ার ইস্যু করেও অর্থ তুলতে পারে।
আমি কীভাবে শেয়ার কিনব?
একটি ডিম্যাট ও ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
যেমন: Angel One, Zerodha, Groww – এই ধরনের ব্রোকার প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে।
এরপর আপনাকে KYC (নথি যাচাই) সম্পন্ন করতে হবে – যেমন: প্যান কার্ড, আধার কার্ড, মোবাইল নম্বর ও ছবি জমা দিতে হবে।
তারপর আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে হবে যাতে আপনি সহজেই টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করার পর আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে টাকা লোড করতে হবে।
এরপর ব্রোকারের অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে আপনি শেয়ার কেনাবেচার (Buy/Sell) অপশন দেখতে পাবেন।
সেখানে আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে চান, সেটি সার্চ করে সহজেই Buy ক্লিক করে শেয়ার কিনতে পারবেন।
শেয়ার বাজারে কীভাবে লাভ করা যায়?
📈 শেয়ার বাজারে দু'টি উপায়ে লাভ করা যায়:
1️⃣ মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভ (Capital Gain):
আপনি যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার এখন কিনে রাখেন এবং ভবিষ্যতে সেই শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে যায়, তাহলে আপনি সেটি বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন।
2️⃣ ডিভিডেন্ড আয়ের মাধ্যমে:
কিছু ভালো কোম্পানি প্রতি বছর তাদের মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে ডিভিডেন্ড হিসেবে বিতরণ করে। আপনি যদি সেই কোম্পানির শেয়ারধারী হন, তাহলে আপনি ডিভিডেন্ড আকারে নগদ অর্থ লাভ করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
এই দুইভাবে লাভ করার জন্য অবশ্যই ভালো এবং মজবুত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।
যদি ভুল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে লাভের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকবে!
শেয়ার বাজার কি জুয়ার মতো?
শেয়ার বাজারকে অনেকে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—যদি কারও সঠিক জ্ঞান, গবেষণা ও ধৈর্য থাকে, তবে শেয়ার বাজার কখনোই জুয়া নয়। এটি একটি পরিকল্পিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র।
শেয়ার বাজার কি ইসলামসম্মত?
হ্যাঁ, শেয়ার বাজার ইসলামসম্মত — যদি তা সুদমুক্ত পরিচালিত কোম্পানি হয়।
কীভাবে সাধারণ মানুষ শেয়ার বাজারে অংশ নিতে পারে?
একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তার পর শেয়ার বাজারে অংশ নিতে পারবেন।
শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে?
শেয়ার বাজারে অনেক কোম্পানি থাকে, তারা তাদের মালিকানার একটি অংশ সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে। এজন্য সাধারণ মানুষ সেই শেয়ার কেনাবেচা করে লাভ বা ক্ষতি করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হয়।
BSE ও NSE কী?
BSE মানে Bombay Stock Exchange (বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ) এবং NSE মানে National Stock Exchange (ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ)।
শেয়ার কেনার জন্য কী কী দরকার?
আপনার যদি প্যান কার্ড, আধার কার্ড, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে আপনি একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এরপর আপনি ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা যোগ করে যেকোনো শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন।
Demat ও Trading অ্যাকাউন্ট কী?
আগে শেয়ার কেনার পর সেগুলো কাগজে হাতে পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো ইলেকট্রনিকভাবে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকে। শেয়ার কেনা-বেচার জন্য এখন ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়।
কিভাবে Demat অ্যাকাউন্ট খুলি?
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাগবে, যেমন:
✅ আধার কার্ড
✅ প্যান কার্ড
✅ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (চেক বা পাসবুক)
✅ ব্যাংক-লিঙ্কড মোবাইল নম্বর
✅ একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি বা সেলফি
এরপর আপনাকে একটি বিশ্বস্ত ব্রোকার বেছে নিতে হবে — যেমন:
Zerodha, Groww, Angel One, 5Paisa ইত্যাদি।
📱 পছন্দের ব্রোকারের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে সাইন আপ করুন।
ডকুমেন্টগুলো নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আপলোড করুন এবং eSign সম্পন্ন করুন।
🟢 সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, অটোমেটিকভাবে আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে যাবে।
শেয়ার বাজার থেকে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
শেয়ার বাজার থেকে যেমন আনলিমিটেড উপার্জন করা সম্ভব, ঠিক তেমনি আপনি যত টাকাই বিনিয়োগ করুন না কেন, সেই পুরো টাকাটাই হারানোর ঝুঁকিও থাকে।
শেয়ার ধরে রাখলে লাভ বেশি নাকি দ্রুত বিক্রি করলে?
সব সময় দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ ধরে রাখাই ভালো, কারণ একটি কোম্পানিকে উন্নতি করতে সময় লাগে।
লং টার্ম বনাম শর্ট টার্ম বিনিয়োগ – কোনটা ভালো?
লং টার্ম
কোন শেয়ার কিনলে লাভ হবে?
যদি কোম্পানিটি ফান্ডামেন্টালি শক্তিশালী হয়, মাঝেমধ্যে বাজারে মন্দা থাকলেও ধৈর্য ধরলে ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
লাভ হলে টাকা কিভাবে তুলব?
আপনি যখন শেয়ার বিক্রি করবেন, তখন সেই টাকার পুরোটা আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে জমা হবে। সেখানে ‘উইথড্র’ অপশন থাকবে। যত টাকা তুলতে চান, তা নির্বাচন করে উইথড্র দিলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
শেয়ারে লস হলে কি হবে?
শেয়ারে লস হলে আপনার অ্যাকাউন্টের টাকার পরিমাণ কমে যায়। ধরুন, আপনি ১০০ টাকার দরে ১০০টি শেয়ার কিনেছেন, যার মোট দাম ১০,০০০ টাকা। এখন যদি শেয়ারের দাম ৮০ টাকায় নেমে যায়, তাহলে আপনার ২,০০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তবে যদি আপনি সেই শেয়ার বিক্রি না করেন, তাহলে সেটা ভবিষ্যতে লাভেও পরিণত হতে পারে কিংবা আরও ক্ষতিও হতে পারে। কিন্তু যদি শেয়ারটি ফান্ডামেন্টালি শক্তিশালী হয়, তাহলে দাম পুনরায় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেয়ার বাজারে কি গ্যারান্টি আছে?
শেয়ার বাজারে লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে, কিন্তু কোনো গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। কারণ, যখন আপনি কোনো শেয়ার কেনেন, সেটা আসলে একটি ব্যবসায় অংশীদার হওয়ার মতো। আর ব্যবসায়ে সফল হতে হলে ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং সঠিক জ্ঞান — এই তিনটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।
লাভের টাকা কি ট্যাক্স দিতে হয়?
হ্যাঁ, শেয়ার বাজার থেকে লাভের উপর ট্যাক্স দিতে হয়। একে বলে Capital Gains Tax (মূলধন লাভ কর)।
হ্যাঁ, শেয়ার বাজার থেকে লাভের উপর ট্যাক্স দিতে হয়। একে বলে Capital Gains Tax (মূলধন লাভ কর)।
শেয়ার থেকে প্যাসিভ ইনকাম পাওয়া যায়?
আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন, সেই কোম্পানির উপরই লাভ বা প্যাসিভ ইনকাম নির্ভর করে।
ডিভিডেন্ড কী?
কোম্পানির লাভের একটি অংশ, যা তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়, সেটাই ডিভিডেন্ড।
কোন কোম্পানির শেয়ার কিনব?
ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং এবং যে কোম্পানির মধ্যে মজবুত ভিত আছে, সেই পরিচিত কোম্পানির শেয়ার কিনুন।
কী দেখে ভালো শেয়ার চিনি?
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ দেখেই ভালো শেয়ার চেনা যায়।
Fundament analysis কীভাবে করব?
কোম্পানির আয়, লাভ, ঋণ এবং প্রতিবছর কতটা লাভ বা ক্ষতি হয়েছে — এসব দেখে ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ করা যায়।
PE Ratio কী?
কোম্পানির শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত উদাহরণ: যদি কোনো কোম্পানির একটি শেয়ারের দাম হয় ১০০ টাকা এবং প্রতি শেয়ারে আয় (EPS) হয় ১০ টাকা, তাহলে PE Ratio = ১০০ ÷ ১০ = ১০।
এর মানে, একজন বিনিয়োগকারী প্রতি ১ টাকা লাভের জন্য ১০ টাকা দিতে রাজি।
ROE, EPS, Debt-to-Equity Ratio – এগুলো কী বোঝায়?
ROE বা Return on Equity হলো এমন একটি ফিনান্সিয়াল রেশিও, যা দেখায় শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানিকে যে টাকা দিয়েছেন, তার উপর কোম্পানি কত লাভ করেছে।
EPS বা Earnings Per Share বোঝায়, একটি কোম্পানি প্রতি একটি শেয়ার থেকে কত টাকা আয় করছে বা লাভ করছে।
Debt-to-Equity Ratio হলো একটি কোম্পানির মোট ঋণ এবং নিজের টাকার (ইকুইটি) মধ্যে তুলনা।
এই রেশিও যত কম হয়, তত ভালো, কারণ তা দেখায় কোম্পানি কতটা কম ঋণের উপর নির্ভরশীল।
কোন ইন্ডাস্ট্রি ভালো?
কোনো ইন্ডাস্ট্রি একেবারে ভালো বা খারাপ নয় — সবকিছুই সময় ও বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
তবুও কিছু স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় কোম্পানি সব সময় বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারে।
Blue Chip কোম্পানি কী?
Blue Chip কোম্পানি হলো এমন একটি পুরাতন, প্রতিষ্ঠিত ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানি, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভালো ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স করে আসছে। এই কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেশি থাকে এবং এগুলো সাধারণত বাজারে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।
Penny Stock মানে কী?
যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব কম, যেমন ১ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকে — সেগুলোকে Penny Stock বলা হয়। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম খুব দ্রুত ওঠানামা করে।
IPO মানে কী?
যখন কোনো কোম্পানি প্রথমবারের মতো শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ার অফার করে, তখন সেটাকে আইপিও (IPO) বলা হয়।
যখন কোনো কোম্পানি প্রথমবারের মতো শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ার অফার করে, তখন সেটাকে আইপিও (IPO) বলা হয়।
IPO এর পুরো নাম: Initial Public Offering (প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু)
এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো বেসরকারি কোম্পানি প্রথমবার পাবলিক থেকে মূলধন তোলে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে।
IPO তে আবেদন করব কি না?
কোনো কোম্পানির মৌলিক ভিত্তি (ফান্ডামেন্টাল) যদি শক্তিশালী হয়, শেয়ার ইস্যুর মূল্য যদি তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং আর্থিক অবস্থাও মজবুত হয় — তবে ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা থাকলে সেই IPO-তে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস কী?
দামের চার্ট (Price Chart), ক্যান্ডেলস্টিক (Candlestick), রেখা (Line), বার (Bar), সহায়তা ও প্রতিরোধ (Support & Resistance), প্রবণতার রেখা (Trend Lines), নির্দেশক (Indicators), চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns) — এগুলোই টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মূল উপাদান।
চার্ট কাকে বলে?
শেয়ার বাজারে ক্যান্ডেলস্টিক এর গ্রাফকে চার্ট বলা হয়, যেখানে কোম্পানির শেয়ারের দাম পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
শেয়ার বাজারে ক্যান্ডেলস্টিক এর গ্রাফকে চার্ট বলা হয়, যেখানে কোম্পানির শেয়ারের দাম পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন কী?
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন হলো জাপানি ক্যান্ডেল চার্টের মতো একটি পদ্ধতি, যা বাজারের মনোভাব বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন হলো জাপানি ক্যান্ডেল চার্টের মতো একটি পদ্ধতি, যা বাজারের মনোভাব বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়।