শেয়ার বাজার সম্পর্কে ভুল ধারণা কি এখনো আপনার মাথায় ঘুরছে? “জুয়া”, “বড়লোকদের খেলা”, “সর্বনাশের রাস্তা”—এই শব্দগুলো কি আপনাকেও কেউ বলেছে? তাহলে একবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন,
শেয়ার বাজার নিরাপদ?
এই প্রশ্নটা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে যারা শেয়ার বাজারে কাজ করছেন—তাদের মাথায়ও ঘোরাঘুরি করে। “বিশ্বাস” শব্দটা শেয়ার বাজার সম্পর্কে তাদের মনে নেই বললেই চলে। আর যাই হোক, শেয়ার বাজার যে একটা ব্যবসা—এই জিনিসটা সাধারণ মানুষের মাথায় নেই। যার ফলে “নিরাপদ” শব্দটা তাদের মাথায় ঘুরপাক খায়।
শেয়ার বাজার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে এটি ঝুঁকির মধ্যেও একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা।
১. ঝুঁকি আছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়
২. লোকসানের ভয় কম অভিজ্ঞতা আর ধৈর্য্য
৩. ব্যাংক ও পোস্ট অফিস থেকে আলাদা
৪. ভাল তথ্যই আসল সুরক্ষা
৫. স্মার্ট বিনিয়োগই নিরাপদ বিনিয়োগ
৬. বাজার পড়লেও সব হারাবেন না
৭. গাইড না থাকলে বিপদ
৮. লাভ করতে সকলে আসে কিন্তু জ্ঞান অর্জন করতে কেউ আসে না
1.শেয়ার বাজারে ঝুঁকি আছে, তবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়!
শেয়ার বাজার আসলে একটি ব্যবসা, আর ব্যবসা মানেই কিছুটা ঝুঁকি থাকবেই। তবে সেই ঝুঁকি যদি আপনি সচেতনভাবে বিশ্লেষণ করে বুঝে নিতে পারেন, তাহলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।
অনেকেই মনে করেন শেয়ার বাজারে ঝুঁকি আছে—আসলে তা নয়। সত্যিকার অর্থে ঝুঁকির বড় অংশটা আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। কারণ, যতই আমরা তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণে দক্ষ হয়ে উঠি না কেন, ভবিষ্যতের ব্যবসার ফলাফল আমরা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না।
চলুন একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝি:
শেয়ার বাজার হল এমন একটি জায়গা যেখানে বড় বড় কোম্পানি তাদের শেয়ার ইস্যু করে, আর সাধারণ মানুষ সেই শেয়ার কেনা-বেচা করে মুনাফা বা ক্ষতির অংশীদার হয়। অর্থাৎ, আপনি যখন কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনেন, তখন আপনি সেই কোম্পানির একটি ক্ষুদ্র অংশের মালিক হয়ে যান।
ধরুন, আপনি Tata কোম্পানির ১০০টি শেয়ার ১০০ টাকা দরে কিনে ফেললেন, যার মানে দাঁড়ায় আপনি ১০,০০০ টাকার বিনিয়োগ করলেন। এর মাধ্যমে আপনি Tata কোম্পানির একজন ক্ষুদ্র মালিক হলেন, এবং একইসাথে আপনি কোম্পানির একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীক অংশীদারও হলেন।
এখন প্রশ্ন হলো – আপনি এই বিনিয়োগটি কতটা ভেবে, কতটা বিশ্লেষণ করে করলেন?
যদি আপনি Tata কোম্পানির ব্যবসার ভবিষ্যৎ, আয়, ব্যয়, মুনাফা, পরিচালনা পর্ষদ এবং বাজার চাহিদার মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন যে শেয়ার বাজার কতটা নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ।
সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করলে, ঝুঁকি নয়—জ্ঞানই হবে আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ।
2.লোকসানের ভয়: কম অভিজ্ঞতা আর ধৈর্যের অভাব
শেয়ার বাজারে লোকসানের ভয় বেশি থাকে তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো—ভয় বেশি, অভিজ্ঞতা কম এবং ধৈর্যের অভাব। কারো যদি ধৈর্য এবং অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে শেয়ার বাজার আপনার জন্য নিরাপদ নয়।
শেয়ার বাজারকে বুঝতে গেলে আপনাকে যেমন ধৈর্য ধরে থাকতে হবে, তেমনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
আমাদের StockMarketWealth ব্লগ ভালোভাবে পড়তে হবে, কারণ শেয়ার বাজার একটি ব্যবসা। আর ব্যবসা না শিখে কেউই নিরাপদভাবে এতে থাকতে পারে না।
> মনে রাখবেন, শেয়ার বাজারে সফল হতে হলে শিক্ষা, ধৈর্য এবং অভিজ্ঞতা—এই তিনটি সম্পদ আপনার কাছে থাকতে হবে।
3.শেয়ার বাজার ব্যাংক ও পোস্ট অফিস থেকে আলাদা নয়
অনেকেই ভাবেন, শেয়ার বাজার ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু একটু ভেবে দেখুন — ব্যাংক ও পোস্ট অফিস, যাদের উপর সাধারণ মানুষের পূর্ণ ভরসা ও নির্ভরতা রয়েছে, তারাও কিন্তু সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে।
ব্যাংকের উপর মানুষের রয়েছে একটি নিশ্চয়তা, আর পোস্ট অফিসের উপর রয়েছে গ্রামগঞ্জের মানুষের অগাধ বিশ্বাস। অথচ এরা নিজেরা যে অর্থ পরিচালনা করে, তার বড় অংশ শেয়ার বাজারেই বিনিয়োগ হয়।
> তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন, যখন ব্যাংক ও পোস্ট অফিস নিজেরাই শেয়ার বাজারে ভরসা রাখে, তখন এই বাজার কতটা নিরাপদ হতে পারে!
4.ভালো তথ্যই আসল নিরাপত্তা।
5.স্মার্ট বিনিয়োগ মানেই নিরাপদ বিনিয়োগ
স্মার্ট বিনিয়োগ বলতে বোঝানো হয় সেইসব কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করা, যেগুলো আপনি ভালোভাবে চেনেন অথবা বহু বছর ধরে শেয়ার বাজারে দেখতে পাচ্ছেন।
6.বাজার পড়লেও সব হারিয়ে যাবে না – বিনিয়োগের বুদ্ধিমানের দৃষ্টিভঙ্গি
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে অনেকেই একটি কোম্পানিকে “সেরা” ভেবে সেখানে পুরো পুঁজি ঢেলে দেন। অথচ বাস্তবতা হলো, একটি কোম্পানিতে সব টাকা বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করে কোম্পানির মৌলিক শক্তি বোঝা এবং পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য (Diversification) বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তেমনি সঠিক বিশ্লেষণ করে একটি ভালো কোম্পানিতে বেশি টাকা বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানদের কাজ। কারণ, যেসব কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি ও স্থায়িত্ব দেখাতে সক্ষম, সেখানে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম হয় এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।
তবুও মনে রাখুন, বিনিয়োগ গুরু বেঞ্জামিন গ্রাহামের কথা — “আপনার বিনিয়োগ যেন এমন টাকা দিয়ে হয়, যা হারালেও আপনার জীবনের উপর বড় কোনো প্রভাব না পড়ে।” অর্থাৎ, বিনিয়োগের আগে সেই টাকা আপনার বাড়তি বা অতিরিক্ত হোক। এই মাইন্ডসেট যদি আপনার থাকে, তাহলে ঝুঁকি কমে এবং শেয়ার বাজার আপনার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ ও লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।
7.গাইড না থাকলে বিপদ
শেয়ার বাজারে ‘গাইড’ বলতে বোঝানো হয়, আপনাকে আগে থেকেই শৃঙ্খলাবদ্ধ বা ডিসিপ্লিনড হতে হবে। কারণ শেয়ার বাজারে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, তাহলে আপনি কখনোই সফলতা পাবেন না এবং শেয়ার বাজারকে নিরাপদও মনে হবে না।
আর সবচেয়ে বড় কারণ হলো — শেয়ার বাজার সবসময় উঠানামা করে, কিন্তু যদি আপনি একটি ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ধরে রাখতে পারেন, তাহলে আপনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বাজারের প্রকৃত নিরাপত্তা বুঝতে পারবেন। কেন জানেন? কারণ যারা শেয়ার বাজারে টাকা হারান, তাদের মধ্যে প্রায়ই ডিসিপ্লিনের অভাব থাকে।
তারা ভাবে — "আমি তো শুধু একটা শেয়ার কিনেছি", কিন্তু আসলে আপনি যখন একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনছেন, তখন আপনি সেই কোম্পানির মালিকানার একটি অংশ কিনছেন, অর্থাৎ একটি ভালো ব্যবসার শুরু করছেন।
8.শেয়ার বাজারে সবাই আসে লাভ করতে, কিন্তু জ্ঞান অর্জন করতে খুব কম জনই আসে!
শেয়ার বাজার মানেই প্রচুর টাকা — এই মনোভাব অনেকের মধ্যে দেখা যায়। তারা সারাক্ষণ লাভের আশায় থাকে, কিন্তু বুঝতে চায় না যে এটি একটি বিজনেসের ক্ষেত্র। অনেকে শেয়ার বাজারকে লটারি মনে করে, আর সেই আশাতেই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে।
আপনি যদি সঠিকভাবে শেখেন, বিশ্লেষণ করেন, বুঝে বিনিয়োগ করেন — তাহলে এটি আপনার জন্য নিরাপদ।
আর যদি না শিখে, না বুঝে, গুজবে ভর করে বিনিয়োগ করেন — তাহলে এটি অবশ্যই বিপদের পথে নিয়ে যাবে।
তাহলে উপায় কী?
বিনিয়োগ গাইড
মৌলিক বিশ্লেষণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের কৌশল
শেষ কথা:
জ্ঞান ছাড়া বিনিয়োগ মানেই ঝুঁকি।আর জ্ঞান সহ বিনিয়োগ মানেই সুযোগ।