স্টকের ফান্ডামেন্টাল রেশিও: সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ
যারা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য ফান্ডামেন্টাল রেশিও বোঝা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণে সহায়তা করে। আজ আমরা একটি উদাহরণসহ এই রেশিওগুলো সহজভাবে বিশ্লেষণ করব।
১. PE Ratio
(Price to Earnings Ratio) – 34.26
PE Ratio দেখায় কোম্পানির স্টকের দাম তার আয়ের তুলনায় কত গুণ বেশি। সাধারণত,
- কম PE Ratio (১০-২০) মানে স্টক আন্ডারভ্যালুয়েড হতে পারে।
- উচ্চ PE Ratio (৩০ বা তার বেশি) মানে স্টক ওভারভ্যালুয়েড হতে পারে, অথবা কোম্পানি উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রাখে।
উদাহরণ: ধরুন, একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৪০ টাকা এবং তার প্রতি শেয়ারে আয় (EPS) ১০ টাকা। তাহলে, PE Ratio = ৩৪০ ÷ ১০ = ৩৪।
২. Price to Book Value (P/B Ratio)
– 4.30
P/B Ratio দেখায়, কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্য তার বুক ভ্যালুর তুলনায় কত বেশি।
- P/B Ratio যদি ১-এর কম হয়, তবে স্টক আন্ডারভ্যালুয়েড হতে পারে।
- P/B Ratio যদি বেশি হয় (৩ বা তার বেশি), তবে এটি ওভারভ্যালুয়েড হতে পারে।
উদাহরণ: যদি একটি কোম্পানির নেট সম্পদ ১০০ কোটি টাকা হয় এবং তার ২৫ কোটি শেয়ার থাকে, তাহলে প্রতি শেয়ারের বুক ভ্যালু ৪ টাকা হবে। যদি বাজার মূল্য ১৭.২০ টাকা হয়, তাহলে P/B Ratio = ১৭.২০ ÷ ৪ = ৪.৩০।
৩. EV to EBIT & EV to EBITDA
(12.94 & 12.64)
EV (Enterprise Value) to EBIT & EBITDA রেশিও কোম্পানির টোটাল ভ্যালু এবং এর অপারেটিং আয়ের অনুপাত বোঝায়।
- EV/EBITDA যদি কম হয় (১০-এর নিচে), তাহলে কোম্পানি সস্তা হতে পারে।
- উচ্চ হলে (১৫+), তাহলে কোম্পানি বেশি মূল্যায়িত হতে পারে।
৪. EV to Sales
– 4.64
এটি দেখায় কোম্পানির টোটাল ভ্যালু তার বিক্রির তুলনায় কত গুণ বেশি। সাধারণত, ২-৩ এর নিচে হলে ভালো।
৫. EV to Capital Employed
– 1.60
এটি দেখায়, কোম্পানি তার মোট মূলধনের তুলনায় কত গুণ বাজারমূল্য পায়। ১-এর নিচে হলে স্টক সস্তা হতে পারে।
৬. PEG Ratio
– 3.47
PEG Ratio (Price/Earnings to Growth) দেখায় PE Ratio-এর তুলনায় কোম্পানির আয়ের প্রবৃদ্ধির হার।
- PEG Ratio যদি ১-এর নিচে হয়, তাহলে স্টক আন্ডারভ্যালুয়েড হতে পারে।
- ২-এর বেশি হলে, স্টক ওভারভ্যালুয়েড হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে, PEG Ratio ৩.৪৭, যা দেখায় কোম্পানি বেশি দামে ট্রেড করছে।
৭. Dividend Yield
– 0.05%
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড দেখায় কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের আয়ের কত শতাংশ ডিভিডেন্ড হিসেবে দিচ্ছে।
- ১%-এর নিচে হলে, ডিভিডেন্ড কম দেয়।
- ৩%-এর বেশি হলে, এটি ভালো ডিভিডেন্ড স্টক হতে পারে।
এখানে ০.০৫% থাকায়, এটি খুবই কম।
৮. ROE (Return on Equity)
– 12.44%
ROE (Return on Equity) দেখায় কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের উপর কত লাভ করছে।
- ১৫%-এর বেশি হলে ভালো।
- ১০%-এর নিচে হলে দুর্বল মনে করা হয়।
এই ক্ষেত্রে ১২.৪৪%, যা মাঝারি মানের।
৯. ROCE (Return on Capital Employed)
– 11.89%
ROCE দেখায়, কোম্পানি তার মোট মূলধন ব্যবহার করে কত লাভ করছে। ১২-১৫% হলে ভালো। এখানে এটি ১১.৮৯%, যা গড় মানের।
উপসংহার
এই রেশিওগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারি, এই কোম্পানির স্টক কিছুটা বেশি মূল্যায়িত হতে পারে (উচ্চ PE, PEG, P/B Ratio)। তবে, এটি একটি উচ্চ প্রবৃদ্ধির কোম্পানি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে ভালো লাভ দিতে পারে।
আপনার জন্য টিপস:
- যদি আপনি লং-টার্ম বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ROE, ROCE এবং PE Ratio বিশ্লেষণ করুন।।
- ভালো স্টক বেছে নিতে ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড, EV/EBITDA এবং PEG Ratio দেখুন।
- সবসময় কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিন।
"এই পোস্টটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। বিনিয়োগের আগে আপনার গবেষণা করুন এবং প্রয়োজনে SEBI-অনুমোদিত ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজারের পরামর্শ নিন।"
তথ্যের উৎস ও রেফারেন্স
- Investopedia: PE Ratio ব্যাখ্যা
- Investopedia: P/B Ratio বিশ্লেষণ
- Investopedia: ROE (Return on Equity)
- Moneycontrol: Indian Stocks PE Ratio Info
- NSE India: Market Data & Fundamentals
- SEBI India: Investor Education & Guidelines