(Instant Pledge)– Pledge বা Margin।
এগুলো শুনে নতুনরা সাধারণত একটু কনফিউজড হয়ে যায়, বুঝতে চায় আসলে ব্যাপারটা কী।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো – Pledge বা Margin আসলে কী, আর এর আসল সুবিধা কোথায়?এই ব্যাপারটাই আমরা বিস্তারিতভাবে জানব
মার্জিন (Margin) বা প্লেজ (Pledge) আসলে কী?
ভাবুন আপনার কাছে আছে ১ লক্ষ টাকা। আপনি এই টাকা দিয়ে বড় বড় কোম্পানির শেয়ার কিনে ফেললেন। এখন এই শেয়ারগুলো আপনার হোল্ডিং-এ পড়ে আছে।
কিন্তু হঠাৎ যদি আপনার আরও টাকা দরকার হয় ট্রেডিং করার জন্য? তখন কি শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে হবে?
না, এখানেই কাজে আসে Margin বা Pledge সুবিধা।
মার্জিন কীভাবে কাজ করে?
শেয়ারগুলো কিনে রেখেছেন, সেগুলোকে স্টকব্রোকারের কাছে বন্ধক (pledge) রাখলে, ব্রোকার ওই শেয়ারের বিপরীতে কিছু টাকা ধার দেয়। এই ধারকেই বলা হয় Margin।
উদাহরণ দিয়ে বলি-
ধরুন আপনার কাছে ১,০০,০০০ টাকার শেয়ার আছে।
এখন আপনি যদি ওই শেয়ারগুলো pledge করেন, তাহলে ব্রোকার আপনাকে প্রায় ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত Margin দিয়ে দেবে (হার ব্রোকারভেদে ভিন্ন হতে পারে)।
অর্থাৎ, আপনার শেয়ার বিক্রি না করেই, শুধু জামানত হিসেবে রেখে আপনি ট্রেডিং করার জন্য অতিরিক্ত টাকা পেয়ে গেলেন।
সুবিধা কোথায়?
শেয়ার বিক্রি করতে হয় না → আপনার হোল্ডিং যেমন ছিল তেমনই থাকবে, শুধু সেগুলো pledge করা থাকবে।তৎক্ষণাৎ টাকা পাওয়া যায় → একে বলে Instant Margin।
অতিরিক্ত সুযোগ → আপনার নিজের ১ লক্ষ টাকার ওপর বাড়তি ৭০ হাজার টাকাও কাজে লাগাতে পারবেন।
লং-টার্ম ইনভেস্টমেন্ট অক্ষুণ্ণ থাকে → শেয়ার বিক্রি না করেই সেগুলো ধরে রেখে ট্রেডিং করা যায়।
ট্রেডারদের জন্য কেন উপকারী?
যদি কখনো ট্রেড করার জন্য হাতে যথেষ্ট ক্যাশ না থাকে, তখন Margin কাজ দেয়। ধরুন মার্কেটে হঠাৎ ভালো সুযোগ এলো, আর আপনার কাছে ক্যাশ নেই। তখন আপনার হোল্ডিং pledge করে সঙ্গে সঙ্গেই Margin পেয়ে ট্রেডিং করতে পারবেন।
সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো—এটার জন্য আলাদা করে কোনো কাগজপত্র বা ঝামেলা নেই। সবকিছু অনলাইনে, কয়েক মিনিটেই হয়ে যায়।
সহজ করে বললে, Margin হলো আপনার শেয়ারের বিপরীতে ব্রোকার থেকে ধার নেওয়া টাকা। আর Pledge মানে হলো শেয়ারকে জামানত রাখা।
আপনি শেয়ার বিক্রি না করেই সেই টাকা ব্যবহার করতে পারবেন ট্রেডিং বা অন্য কোনো বিনিয়োগে।
ঝুঁকি (Risk of Instant Pledge / Margin)
এখন ধরুন, আপনি Option Trading করছেন। আর এই ট্রেড করার জন্য ব্রোকার থেকে Instant Margin ব্যবহার করলেন।এখানে আসল ঝুঁকিটা হলো-
যদি আপনার ট্রেডে লস হয়, তাহলে সেই ক্ষতি মেটানোর টাকা ব্রোকার সরাসরি আপনার হোল্ডিং (যে শেয়ার pledge করেছেন) থেকে কেটে নেবে।
অর্থাৎ, আপনি লাভ করেন বা ক্ষতি করেন-Brokerage charge + Buy/Sell charge সবসময়ই কেটে নেওয়া হবে।
আরও বড় ঝুঁকি কোথায়?
আপনি যে টাকায় ট্রেড করলেন, তার ওপরে প্রতিদিন একটা সুদ (Interest) যোগ হতে থাকে।
SEBI (ভারতের শেয়ার মার্কেট রেগুলেটর) এর নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকাররা নির্দিষ্ট হারে এই সুদ চার্জ করতে পারে।
সুদের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি কোন ব্রোকার ব্যবহার করছেন এবং কত টাকা Margin নিয়েছেন তার ওপর।
যদি লস বেশি হয়?
যদি আপনার নেওয়া Margin-এর চেয়েও বেশি লস হয়ে যায়, তাহলে ব্রোকারের পূর্ণ অধিকার আছে—আপনার হোল্ডিং বিক্রি করে লস কভার করতে।
প্রয়োজনে লিগ্যাল অ্যাকশন পর্যন্ত নিতে।
সহজভাবে বুঝুন
Margin মানে হলো ধার করা টাকা।
যদি সেই ধার করা টাকায় ট্রেড করে লস করেন, তাহলে শুধু আপনার মূল টাকা নয়, সেই ধার নেওয়া টাকাও দিতে হবে। আর না দিতে পারলে ব্রোকার আপনার শেয়ার বিক্রি করে বা লিগ্যালভাবে ব্যবস্থা নিয়ে সেই টাকা তুলে নেবে।
তাই, মার্জিন বা ইনস্ট্যান্ট প্লেজ ব্যবহার করার আগে সবসময় ভেবে নিন—
আপনি যে ট্রেড করছেন, সেটার রিস্ক কতটা?
যদি লস হয়, সেটা মেটানোর মতো ব্যাকআপ টাকা আছে কি না?
আর প্রতিদিন যে সুদ কাটা হচ্ছে, সেটা বহন করতে পারবেন তো?
Pledge করলে প্রতিদিন কত ইন্টারেস্ট (Interest) দিতে হয়?
অনেকেই প্রশ্ন করেন—শেয়ার pledge করলে প্রতিদিন কি ইন্টারেস্ট দিতে হয়? রেটটা কত?উত্তর হলো: হ্যাঁ, আপনাকে প্রতিদিনই ইন্টারেস্ট দিতে হয়।
কারণ, যখনই আপনি আপনার শেয়ার pledge করে ব্রোকার থেকে টাকা নেন, সেটি আসলে এক ধরনের ধার (Loan)। আর ধার নিলে যেমন সুদ দিতে হয়, এখানেও তাই দিতে হয়।
ইন্টারেস্ট রেট কত হয়?
সাধারণত প্রতিদিনের হিসেবে হিসাব করা হয়।
সাধারণত ৯% থেকে ১৫% পর্যন্ত হতে পারে, তবে কিছু ব্রোকারে এটা ২০% পর্যন্তও যেতে পারে।
ব্রোকারভেদে রেট আলাদা হয়।
আপনার নেওয়া Margin-এর পরিমাণ যত বেশি হবে, ইন্টারেস্টও তত বেশি জমবে।
উদাহরণ দিয়ে বোঝাই
ধরুন, আপনার কাছে ১ লক্ষ টাকার শেয়ার আছে।
আপনি সেটা pledge করে ২০,০০০ টাকা Margin নিলেন।
ব্রোকার যদি ১২% বার্ষিক ইন্টারেস্ট চার্জ করে, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ₹6–₹7 টাকার মতো সুদ আপনাকে দিতে হবে।
এই ইন্টারেস্ট আপনার Margin ব্যবহারের দিনের উপর নির্ভর করে কাটা হবে।
অর্থাৎ, আপনি যতদিন Margin ব্যবহার করবেন, ঠিক ততদিনই প্রতিদিনের হিসেবে ইন্টারেস্ট দিতে হবে।
সহজ করে বললে
Pledge মানে হলো শেয়ারের বিপরীতে ধার নেওয়া। আর ধার নিলে ইন্টারেস্ট দিতেই হবে।
রেট ব্রোকার অনুযায়ী বদলায়, তবে সাধারণত বছরে ৯%–২০% এর মধ্যে থাকে।
কিন্তু সব কোম্পানিতে আপনি মার্জিন নিয়ে ইনভেস্ট বা ট্রেড করতে পারবেন না। যেসব ব্রোকারকে SEBI অনুমতি দিয়েছে, শুধু সেই ব্রোকার হাউসগুলোর মাধ্যমেই এই সুবিধা পাওয়া যায়।
অর্থাৎ সরাসরি কোনো কোম্পানি মার্জিন দেয় না। সবকিছু হয় আপনার ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে।
সরকারের আয় কোথা থেকে হয়?
অনেকে ভাবে সরকার আলাদা করে “মার্জিন” থেকে লাভ করে। আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। সরকারের আয় হয় কিছু নির্দিষ্ট চার্জ থেকে-STT (Securities Transaction Tax):
শেয়ার কেনা-বেচার সময় লেনদেনের উপর একটি নির্দিষ্ট ট্যাক্স সরকার কেটে নেয়।
ব্রোকার চার্জের ভেতরকার ট্যাক্স:
যখন ব্রোকারেজ হাউস কমিশন নেয়, তার ভেতরেও সরকারের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাট/ট্যাক্স থাকে।
মার্জিন ফান্ডিংয়ের উপর চার্জ:
আপনি যদি মার্জিন ব্যবহার করে ট্রেড করেন, তার উপরেও সুদ (interest) বসে। সেই সুদের পেছনে সরকারও ট্যাক্স আদায় করে।
অর্থাৎ, সরকার সরাসরি “মার্জিন” দেয় না, তবে আপনার প্রতিটি ট্রেড, কমিশন ও মার্জিন ফান্ডিংয়ের সাথে রাজস্ব (Revenue) সংগ্রহ করে।
তাহলে প্রশ্ন আসে—মার্জিন ট্রেডিং কি সবার জন্য ভালো?
আসলে না।
মার্জিন ট্রেডিং মানে হলো ধার করে ট্রেড করা। আপনি আপনার নিজের মূলধনের বাইরে অতিরিক্ত টাকা ধার নিয়ে শেয়ার কেনেন। এতে লাভ হতে পারে, আবার ক্ষতিও দ্বিগুণ হতে পারে।
কেন ঝুঁকি বেশি?
বাজার যদি হঠাৎ উল্টো দিকে যায়, তাহলে আপনাকে শুধু আপনার নিজের টাকা নয়, ধার করা টাকাটারও ক্ষতি সামলাতে হবে।
শেষ কথা
প্লেজ করবেন না! বিশেষ করে যারা একেবারে নতুন, এখনো রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শেখেননি। আর হ্যাঁ, আপনি যদি অভিজ্ঞ হন, তবুও একটু সাবধানে চলুন, কারণ ধার নিয়ে কিছু করা মানেই অতিরিক্ত রিস্ক। তবে হ্যাঁ, আপনার যদি টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা না থাকে, তখন চাইলে নিজের টাকা না ব্যবহার করে ব্রোকারের কাছ থেকে ধার নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।