Why People Lose Money in Option Trading অপশন ট্রেডিংয়ে কেন লোকসান হয়?

অপশন ট্রেডিংয়ে কেন আমরা বারবার লস করি জানেন?আসল কারণটা জানতে এখনই দেখে নিন StockMarketWealth-এ (বাংলায়)।

আমি কেন আজ লস করলাম: এক্সপায়ারি ট্রেডিংয়ের শিক্ষা

আমি যতদিন ট্রেডিং করেছি, কোনো দিনই সেরকম বড় লাভ করতে পারিনি। তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল—আমার মনের গভীরে বসে থাকা লোভ। আমি বারবার ছোট ছোট লাভকে অবহেলা করেছি, ভেবেছি আরও বড় লাভ আসবে। কিন্তু সেটাই আমার পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্রেডিংয়ের জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিস হল শৃঙ্খলা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আমার মধ্যে কখনোই সেই শৃঙ্খলাবোধ ছিল না। আর তাই আমি একাধিকবার একই ভুল করে গেছি। দিনের পর দিন শুধু ক্ষতির মুখ দেখেছি। এ অভিজ্ঞতা কেবল আমার একার নয়—অনেক নতুন ট্রেডার প্রতিদিন এই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।

একজন ট্রেডার কম্পিউটারে স্টক মার্কেটের চার্ট বিশ্লেষণ করছেন



 আজকের অভিজ্ঞতা: একটি ভুল সিদ্ধান্তের কঠিন ফল

আজ আমি সকালে চার্ট খুলে বসলাম। মাথায় কোনো স্ট্র্যাটেজি ছিল না, কোনো পরিকল্পনাও না। ট্রেডিং শুরুর ১৫ মিনিটে দুটি ক্যান্ডেল তৈরি হয়েছে, আর তখনই একটি সবুজ ক্যান্ডেল দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম—এবার কিছু একটা হবে!

হাতে নগদ ছিল না, তাই পজিশন হালকা করতে বাধ্য হলাম। পাওয়ার ও হোল্ডিং-এর ১১০টি শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা পেলাম, তা দিয়ে ২৫৪০০ স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কিনে নিলাম মাত্র ৩৯ টাকায়।
তা-ও আবার এক্সপায়ারি দিনে!

প্রথমেই ২০০ টাকার লাভ হলো। ঠিক তখনই আমার মধ্যে একরকম জেদ ঢুকে পড়লো—এটা তো মাত্র শুরু, প্রিমিয়াম ১০০ বা ২০০ পর্যন্ত যাবে, তখনই বিক্রি করবো।

এই সিদ্ধান্তটাই আমার সর্বনাশ ডেকে আনলো।




লাভ থেকে লসে যাত্রা: মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ

প্রথমে ৫০০ টাকা লস দেখাল, এরপর সেটা হলো ১০০০ টাকা। হঠাৎ ৭০০ টাকায় নামল, পরে আবার ৫০০-এ এসে ঠেকলো। কিন্তু আমি ধরেই নিলাম, এটা সাময়িক—দেখতেই দেখতে আবার উপরে যাবে।

আমি নিফটির ৫ মিনিটের চার্ট খুলে বসে রইলাম। মনে হচ্ছিল চার্টে প্রতিটা ক্যান্ডেল যেন আমার সাথে খেলা করছে। উঠছে, নামছে — একেবারে অস্থির প্যাটার্ন। তখন নিফটি ঘোরাফেরা করছে ২৫৩৮০ থেকে ২৫৩৯০-র মধ্যে।

আমি ভাবছি — “আজ না আজই ২৫৪০০ ছুঁয়ে ফেলবে, আমি প্রফিটে বের হবো।” কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারে আলাদা। আমার লস ১৫০০ ছাড়িয়ে গেলো — তবুও বিক্রি করিনি।
তারপর ২০০০, তারপর ২৫০০…
তবুও আমি “আশার মোহে” আঁকড়ে ধরেই বসেছিলাম।




বাস্তবতা যখন মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়

আমার সেই কল অপশন একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল। আমার নিফটির ২ লট এখন শুধু অ্যাকাউন্টে লাল রং ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সেই মুহূর্তে আমি ভেঙে পড়লাম।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম —

“আমি কেন আজ ট্রেড করলাম?”
“আমি কেন কোনো পরিকল্পনা ছাড়া মার্কেটে প্রবেশ করলাম?”
“আমার কি কোনো ট্রেডিং ডিসিপ্লিন ছিল?”
“আমি কি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছি?”

উত্তর ছিল—না।


ট্রেডিং: যুক্তি না আবেগ?

আজ আমি বুঝলাম, আমি ট্রেডিং করিনি—আমি আবেগে কাজ করেছি। আমার মাথায় ছিল না কোনো রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, না কোনো স্টপলস, না ছিল প্রফিট বুকিং-এর পরিকল্পনা

শুধু ছিল জেদ, আশা আর অলীক কল্পনা।

এটা কোনো এক দিনের কাহিনী নয়। এই একই কাহিনী প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ট্রেডারের জীবনে ঘটে চলেছে। লোভ, আবেগ আর অনিয়ন্ত্রিত ট্রেডিং অনেক সম্ভাবনাময় মানুষকে ডুবিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন।


যে শিক্ষাগুলো পেলাম

আজকের ট্রেড থেকে আমি কিছু অমূল্য শিক্ষা পেয়েছি, যা ভবিষ্যতে আমি মনে রাখবো:

  1. ছোট লাভকেও সম্মান করতে হবে।
    বড় লাভের আশায় ছোট প্রফিট মিস করলে, ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  2. জেদ নয়, পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।
    ট্রেডিংয়ে জেদ মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিকল্পনা না থাকলে ট্রেডে না যাওয়াই ভালো।

  3. স্টপলস ও টার্গেট ছাড়া ট্রেড নয়।
    নিজের মনের উপর নির্ভর করে ট্রেড করা মানে নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনা।

  4. অপশন বায়ার মানেই হাই রিস্ক ট্রেডার।
    বিশেষ করে এক্সপায়ারি দিনে অপশন কেনা মানে টাইম বম্বের উপর বসে থাকা।

  5. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।
    ট্রেডিং মানে একটা নিয়ন্ত্রিত খেলা, আবেগপ্রবণ খেলা নয়।


সতর্কতা: ট্রেডিং কি সবার জন্য?

বিশ্বের অন্যতম সেরা বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেছেন —

“ট্রেডিং এক ধরনের নেশা, যা ড্রাগ নেওয়ার মতোই মারাত্মক হতে পারে।”

আমি সেই নেশার গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। বারবার একই ভুল করেছি। লোভ, জেদ, আশাভরা দৃষ্টি — সবকিছু মিলিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছি।

তাই আমি আজ সকলকে সতর্ক করতে চাই —
যদি আপনি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে দয়া করে ট্রেডিং-এ না নামুন।


উপসংহার: ইনভেস্টিং হোক আপনার পথ

যারা সাধারণ মানুষ, চাকুরিজীবী বা নতুন ট্রেডার, তাদের জন্য আমার একটাই পরামর্শ —
ট্রেডিং নয়, ইনভেস্টিং হোক আপনার ভবিষ্যতের পথ।

সঠিক কোম্পানিতে, সঠিক বিশ্লেষণ করে, লং-টার্মে বিনিয়োগ করলেই আপনি সত্যিকারের রিটার্ন পাবেন।
ট্রেডিংয়ের তীব্র ওঠানামা ও মানসিক চাপ এক সময় আপনার ধৈর্য ও অর্থ দুইই শেষ করে দেবে।

আমার ভুল থেকে আপনারা শিক্ষা নিন।
আমার অভিজ্ঞতা হয়তো আপনাকে এক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বাঁচাতে পারে।


 মনে রাখবেন:
শেয়ার বাজারে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
যদি আপনি সেটা না শিখে থাকেন, তবে এই বাজারে টিকে থাকা কঠিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন